মুফতি আব্দুর রহিম কচি আর নেই। ভাবতেই পারি না সুস্থ অবস্থায় তাকে যেরকম দেখেছি সেই দেখাই যেন চির জাগরুক থাকুক। সাপ্তাহিক দখিনায়নের সম্পাদকÑ এই ছিল তার মূল পরিচয়। মুফতি আব্দুর রহিম কচি আর দখিনায়ন সমার্থক ছিল। সাপ্তাহিক দখিনায়নের ডিকা¬রেশন বের করা এবং পত্রিকাটি প্রকাশনা ও সম্পাদনার পুরো দ্বায়িত্বটি ছিলো মুফতি আব্দুর রহিম কচির জীবনের এক অসাধারণ সাধনার বিষয়। শুধুমাত্র একটি পত্রিকার ডিকা¬রেশন পাওয়ার জন্য এ রকম সাধ্য-সাধনার নজির দ্বিতীয়টি আর খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। তৎকালীন সাতক্ষীরা মহাকুমা থেকে সাপ্তাহিক দখিনায়নের ডিকা¬রেশন পাওয়ার উদ্দেশ্যে খুলনার ডিসি অফিসে যোগাযোগ করতে মুফতি আব্দুর রহিম কচি দীর্ঘদিন সাইকেল চালিয়ে যাতায়ত করেছেন। সাইকেলই ছিল তার একমাত্র বাহন। সাপ্তাহিক দখিনায়ন প্রকাশের পর থেকে প্রত্রিকাটি সাতক্ষীরার সাংবাদিকতার জগতে একটি বস্তুনিষ্ঠ, আর্দশবাদী ও সুস্থধারার পথিকৃতের ভূমিকা পালন করে থাকে। সাতক্ষীরার সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা ও মান উন্নয়নের জন্য দখিনায়নের উদ্যোগে কর্মশালারও আয়োজন করা হয়। পত্রিকার সম্পাদক ছাড়াও মুফতি আব্দুর রহিম কচি এক জন উঁচুমানের আবৃত্তিকার ও অভিনয় শিল্পী ছিলেন। একজন বৃদ্ধের ভূমিকায় তার অনবদ্য অভিনয় ছিলো অতুলনীয়, অবিস্মরণীয়। অভিনয় ও নাট্য শিল্পীদের নিয়ে সংগঠনও গড়ে তুলেছিলেন। কচি ভাই হিসাবে সর্বজনের কাছে তার একটি বিশেষ গ্রহণ যোগ্যতা ছিল। অত্যন্ত বন্ধুবৎসল সদালাপী ছিলেন তিনি। মুহুর্তে অন্যকে আপন করে নিতে পারতেন। তবে তিনি তার দখিনায়ন সম্পাদকের প্রধান পরিচয়টি ধরে রাখতে পারেননি। একটি গরংংরহম ষরহশ ঘটে যায়। পত্রিকার কাজ ফেলে রেখে সুন্দরবন অঞ্চলে দিদারের ট্রলার নিয়ে যৌথভাবে চিংড়ি পোনা ধরার ব্যাবসাও করেছেন। এই ঝুঁকিপুর্ণ নৌপথে একমাত্র সঙ্গী ছিলেন তার ট্রলার চালক বিশ্বস্ত মনিদা। এছাড়াও তিনি চিংড়ি হ্যাচিরিতে হিসাবরক্ষকের চাকুরি করেছেন। এর আগে আলুর ব্যবসাও করেছেন। দখিণায়ন পত্রিকা প্রকাশনার প্রাথমিক পর্যায়ে পত্রিকা ও বইয়ের ব্যবসাও করার চেষ্টা করেছেন। বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাতক্ষীরার কয়েকটি পত্রিকার সাথে গড়ে সাপ্তাহিক দখিণায়নকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়ে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করে দেয় সরকার। তারপর সেটি আর পুনরুজ্জীবিত করার কার্যকর কোন চেষ্টা না করে সুলতানপুর বড় বাজারে পান-সিগারেট-স্টেশনারি দোকান দিয়ে পত্র-পত্রিকা ও সাংবাদিকতা জগতের মূল ¯্রােত থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন জীবন কাটাতে থাকেন সাপ্তাহিক দখিণায়নের সম্পাদক মুফতি আব্দুর রহিম কচি। উচ্চ মাধ্যমিকের বেশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাননিÑ কিন্তু তিনি ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত গুণি মানুষ। গুরুতর অসুস্থ হওয়ার বেশ কয়েক বছর আগে থেকে সম্পাদক মুফতি আব্দুর রহিম কচি লোকচক্ষুর অন্তরালে একপ্রকার হারিয়েই ছিলেন। বড় কষ্টে-কষ্টে জীবন ও মৃত্যুর প্রহর গুণে গুণে একদা সর্বজনের সুহৃদ কচি ভাই আজকে যেন একাকী ঝরা পাতার মত নিঃশব্দে ঝরে পড়লেন। মুফতি আব্দুর রহিম কচির সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও স্বপ্নের পরম্পরা বজায় থাকুকÑ তার সহপাঠী ও হিতকাক্সক্ষী হিসাবে আন্তরিকভাবে এই আশা ও কামনা করি। একই সাথে তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আবু সালেক : মুফতি আব্দুর রহিম কচির সহপাঠী ও সম্পাদক, সাপ্তাহিক পূর্ণাশা।