নিজস্ব প্রতিবেদক: পুলিশি গ্রেফতার বাণিজ্য ও হয়রানি বন্ধে পুলিশ সুপারের সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। বিশেষ করে সাতক্ষীরা সদর থানা, কলারোয়া থানা ও সাতক্ষীরা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দ্বারা যাতে সাধারণ ও নিরীহ মানুষ পুলিশি হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য তারা সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরার নবাগত পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের কার্যালয়ে যান। তারা সেখানে সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু পুলিশি হয়রানির এবং পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্যের ঘটনা পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম শওকত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলী, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ অহেদুজ্জামান, কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন, কালারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু ও তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার প্রমুখ। সেখানে উপস্থিত একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, বেশ কিছু দিন ধরে সাধারণ মানুষ কতিপয় পুলিশের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন অজুহাতে সাধারণ মানুষকে বাড়ি থেকে ধরে এনে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে আ’লীগ নেতাদের কাছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরা সদর থানা, কলারোয়া থানা এবং সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এ গ্রেফতার বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। নেতোরা আরও বলেন, নবাগত পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন সাতক্ষীরায় যোগদানের পর আমরা আশা করে ছিলাম, সাধারণ মানুষ পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য ও হয়রানি থেকে রেহাই পাবেন। কিন্তু তা কমেনি। কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেড়েছে। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্বকভাবে নষ্ট হচ্ছে। এটি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে সেখানে উপস্থিত একজন জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামীলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি সাতক্ষীরাকে বলেন, “আমি এসপি সাহেবকে বলেছিÑ আওয়ামীলীগের নেতারা যখন আটককৃত কারও জন্য ফোন করেন। তখন পুলিশ বলে নেতারা জামাতের পক্ষে তদবির করেন। কিন্তু যখন পুলিশ কাউকে রাতে নাশকতার পরকিল্পনাকারী বা সহিংসতার মামলার সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে ধরে নিয়ে আসার পরদিন মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় তখন সেটার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এর মাধ্যমে আ.লীগ নেতাদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে। সরকারি দলের নেতাদের এভাবে অপমান করে প্রকান্তরে সরকারকেই ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে।” ওই নেতা আরও বলেন, আমাদের সাথেও একজন নেতা সরাসরি পুলিশ সুপারকে বলেনÑসুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে তুলে আনার পর সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি উল্টো আমাদের ফোনে উত্তর দেনÑ আপনাদের আওয়ামীলীগ নেতাদের ক্ষমতা আমাদের(পুলিশের) জানা আছে। তারা কিছুই করতে পারবে না।” এ বিষয়ে জেলা আ.লীগের সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, নতুন এসপি আসার পরে আমরা বুধবার প্রথম দলগতভাবে সবাই মিলে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। আমরা সৌজন্য বিনিময়ের পাশাপাশি তাকে অনুরোধ করেছিÑ যেন দোষী ব্যক্তিতে আইনের আওতায় আনা হয় এবং কোন নিরপরাধ মানুষ অযথা হয়রানির শিকার না হয়। সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হলে তা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা সরকারি দলের জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কোনভাবেই চাইব না সরকারের কোন বিভাগের আচরণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হোক।” সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে জানান, পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য ও হয়রানির সুনির্দিষ্ট কয়েকটি ঘটনা সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে আবহিত করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, যারা অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর হোক। কিন্তু যারা নিরাপরাধী তাদেরকে ধরে নিয়ে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা খুবই দু:খজনক। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশ, সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ ও কলারোয়া থানা পুলিশ এ ধরনের ঘটনা সব চেয়ে বেশি ঘটাচ্ছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি সাতক্ষীরার নবাগত পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনকে জানানোর জন্যই আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ সুপারের সাথে বুধবার দুপুরে সাক্ষাত করেছেন। পুলিশ সুপার অভিযোগগুলো মন দিয়ে শুনেছেন। নবাগত পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে আশ^স্ত করে বলেন, সাতক্ষীরার কোন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের হাতে সাধারণ নিরাপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার হলে ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। এখন থেকে কোন নিরাপরাধ মানুষ যাতে পুলিশের দ্বারা কোন ধরণের হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ সদস্যেদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠলে তা পুলিশ সুপারকে সাথে সাথে অবহিত করার জন্য তিনি বলেছেন।