নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কলারোয়া জোনাল অফিসে দালালচক্রের অবাধ দৌরাত্ম্যে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ গ্রাহকরা।
জানা গেছে, সম্প্রতিক কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কয়েকজন গ্রাহক দালালদের খপ্পরে পড়ে অর্থ খুইয়ে মিটার পেলেও তা খুলে নিয়ে গেছে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন। এতে এক এক মাস যাবত অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছে তিনটি পরিবার। শুধু এই তিনটি পরিবার নয়, এমন ভুক্তভোগী অসংখ্য।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোস্তফা পেশায় একজন ইলেকট্রনিক্স মিস্ত্রি। সোনাবাড়িয়া বাজারে তার ইলেকট্রনিক্সের দোকান রয়েছে। দোকানের আড়ালেই তিনি নানা প্রকার অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থেকে রাজপুর অভিযোগ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ ভাগবাটোয়ারা করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি স্থানীয় ইলেকট্রনিক মিস্ত্রিদের হাত করে গ্রাহকের কাছ থেকে নানা সুবিধা হাতিয়ে নেন এলাকায় তিনি বিদ্যুতের অফিসের দালাল বলে পরিচিত ।
বোয়ালিয়া গ্রামের সৌরভ কুমার সরকার বলেন, আমি মিটারের জন্য মোস্তফার কাছে টাকা দিয়েছি। কিছুদিন পর মিটার বসানো হলেও পরে অফিসের লোকজন এসে তা খুলে নিয়ে যায়। আমরা জানতাম না এটি জালিয়াতি।
সৌরভের ফুপু জানান, সোনাবাড়িয়ায় মোস্তফার দোকান আছে। তার বোনের বাড়িও কাছেই। সেই পরিচয়ে আমরা তার কাছে টাকা দিয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারলাম প্রতারিত হয়েছি।
ভাদিয়ালীর প্রবাসী ইয়ার আলী বলেন, আমি বিদেশে থাকায় গ্রামের ইলেকট্রিশিয়ান ওহিদুজ্জামানের মাধ্যমে মিটার নিই। কয়েকদিন আগে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে মিটার খুলে নিয়ে গেছে। আমি দুই মাসের বিলও দিয়েছি। পরে শুনেছি এটি জালিয়াতি। এখন বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠাতে হয়েছে।
দেলোয়ার হোসেন জানান, তার বাকপ্রতিবন্ধী ভাই ইমরানের জন্য মিটার নেওয়ার চেষ্টা করেন। মিটার বসানোও হয়। কিন্তু পরে অফিসের লোকজন এসে তা খুলে নিয়েছে। এক মাস ধরে আমরা অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছি।
সজল ও ওহিদুজ্জামান জানান, তারা মোস্তফার সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও জালিয়াতির বিষয়ে কিছু জানেন না। তারা বলেন, আমরা এসব জানতাম না। গ্রামের ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে আমাদের কাছে মিটার চাইলে আমরা যোগাযোগ করি। কয়েকজনকে মিটার দিয়েছি, কিন্তু যেভাবে জালিয়াতি করা হয়েছে তা আমরা জানতাম না। অফিসে ডেকে একই কথা বলেছি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মোস্তফা কয়েকটি মিটারের বিলের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। হাসানুর রহমানের বিলের টাকা অফিসে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখেছিলেন। মনি মোল্লার মিটার কেটে গেলে পরে আবার অফিসে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে মিটার নিতে হয়েছে। মোস্তফার কাছে টাকা চাইলে তিনি দিতে অস্বীকার করেছেন।
মোস্তফা বলেন, আমরা কি মিটার লাগাতে পারি, তা আমাদের ক্ষমতার মধ্যে নেই। আমার বোনের বাড়ির পাশের লোকজন বিপদে আছে, আমি চাই তারা বিদ্যুৎ পাক। এই মিটারগুলো কিভাবে বসানো হয়েছে আমি জানি না। সাক্ষাতে দেখা করে চা খাওয়ার সময় সব বলব।
পল্লী বিদ্যুতের কলারোয়া জোনাল অফিসের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মো. সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, সঠিক কাগজপত্র দিয়ে অনলাইনে আবেদন করলে আমরা নিয়মিত মিটার দিই। কিন্তু এখানে জালিয়াতির মাধ্যমে তিনটি মিটার বসানো হয়েছিল। গ্রাহকের কাছে বৈধ নথি ছিল না। অনলাইনে সার্চ করেও রেকর্ড পাওয়া যায়নি। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মিটার খুলে আনা হয়েছে।
এ জি এম মো. আমিনুর মৃধা বলেন, মোস্তফা অফিসিয়াল প্রক্রিয়া না মেনে কম্পিউটার দোকান থেকে অর্ডার এডিট করে মিটার সংযোগ দিয়েছেন। তদন্তে প্রমাণ মিলেছে এটি জালিয়াতি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ভুক্তভোগী গ্রাহককে নিয়মিত প্রক্রিয়ায় মিটার দেওয়া হবে।