দেবহাটা

দেবহাটার ৫ নারীর সফলতার কাহিনি

By Daily Satkhira

July 05, 2017

কেএম রেজাউল করিম: দেবহাটার ৫ নারীর কঠোর পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। বর্তমানে তারা সমাজের অন্য মানুষের মত সুখে শান্তিতে পরিবারের সদস্যদের সাথে বসবাস করছে। অধিক পরিশ্রম আর প্রচেষ্টা নিজেদের উন্নয়ন ঘটানোর কাহিনি জানিয়েছেন উপজেলার ৫ নারী।

কঠোর পরিশ্রমী সালমার ব্যবসায় সফলতা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের রবিউল ইসলামের স্ত্রী সালমা খাতুন। তিনি একজন পরিশ্রমী ব্যক্তি। কঠোর পরিশ্রমে তার সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। সফলতার কথা জানিয়ে সালমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি শয্যাশয়ী। তার উপার্জন বন্ধ থাকায় পরিবার একেবারে অচল হয়ে পড়ে। ঠিক সেই সময়ে আমি সংসারের হাল ধরার জন্য কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে আমার কাপড়ের ব্যবসার লভ্যংশদিয়ে সংসার পরিচালনা করছি। এমনকি আমাদের জমির উপর ৩টি পাকা ঘর নির্মান করেছি। যার মধ্যে ২টি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এতে আমার দোকান ও ভাড়া ঘর থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে অনেক ভাল জীবন যাপন করছি। আমার ২ সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। সমাজে আমার গ্রহণ যোগ্যতা বেড়েছে।

বে-সরকারি চাকরিতে ভাগ্য ফিরেছে ঝরনার উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের সখিপুর গ্রামের তুষার রায়ের স্ত্রী ঝরনা রায়। তিনি এইচ,এস,সি পাশ। সফলতার কথা জানিয়ে ঝরনা রায় বলেন, আমার সংসারে ৬জন সদস্য। আমার স্বামী একজন দিনমুজুর। সে অন্যের জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চিংড়ি চাষ শুরু করে। কিন্তু ভাইরাসে সব মাছ মারা যায়। সে কারনে অঅমার স্বামী ঋনের চাপে হতাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তারপক্ষে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ কারনে আমি সংষারে দায়িত্ব গ্রহন করি। আমি বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের একটা ছোট চাকুরীতে যোগদান করি। সেই চাকুরীর উপর নির্ভর করে সংসার চালানো, স্বামীর ঋনের টাকা পরিশোধ, ছেলে-মেয়েদের পড়া-লেখা চালাতে থাকি। বর্তমানে আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুখে দিন কাটছে। আমার মেয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ছেলে ৭ম শ্রেণিতে পড়ছে।

একজন রতœগর্ভ মা ফতেমা দেবহাটার রতœগর্ভা মা ফতেমা। সে উপজেলার খলিশাখালী গ্রামের আব্দুর রহিম মোড়লের স্ত্রী। সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার নিভৃতে পল্লীতে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন ফতেমা খাতুন। তিনি ছিলেন সমাজ সচেতন, শিক্ষানুরাগী এবং আতœপ্রত্যায়ী। নিজে নিরক্ষর হয়েও শিক্ষার প্রতি ছিলেন অদ্যম অনুরাগী। কোন প্রতিকুলতায় তাকে হার মানাতে পারেনি। তার ছিল ৭ ছেলে ২ মেয়ে। স্বামী ছিলেন অন্যর ঘেরের সামান্য বেতনের কর্মচারী। সে কারনে বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করতেন ফতেমা। এই উৎস্য থেকে উৎপাদিত অর্থ দিয়ে ছেলে-মেয়েদের খাতা-কলম কিনে দিতেন। একই বই পর্যাক্রমে সবাই পড়ত। তার সন্তানেরা ৫ম, ৮ম, এসএসসি তে মেধা তালিকায় স্থান করে নেয়। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে উচ্চ শিক্ষায় সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে। যার মধ্যে ৩জন বিসিএস পাশ করেছেন। ৭ ছেলেরা হল ফারুক হোসেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক, কামরুল ইসলাম খুলনা মেট্রোপলিটনের সহকারী কমিশনার, ডাঃ শরিফুল ইসলাম (এফসিপিএস) কনসালটেন্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, আরিফুল ইসলাম চাপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র সরকারী সিনিয়র কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, খায়রুল ইসলাম পলিটেকনিক ইঞ্জিনিয়ার, রফিকুল এম কম পাশ মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক, তরিকুল ইসলাম দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। মেয়েরা হলেন আয়েশা খাতুন বিএ (অনার্স) পাশ এবং আফরোজা খাতুন এম এ পাশ। বর্তমানে তিনি স্বামী সন্তান নিয়ে সুখী সমৃদ্ধিশালী জীবনযাপন করছেন।

তাহেরা এখন স্বাবলম্বী উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের বহেরা গ্রামের শেখ সুরাত আলীর স্ত্রী উম্মে তাহেরা(উষা) স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাহেরা জানান, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য শারিরিক নির্যাতন করত। পিতা গরীব হওয়ায় যৌতুক দিতে না পারায় নির্যতনের মাত্রা বেড়ে যায়। দিনের পর দিন নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাবার বাড়িতে চলে আসেন তাহেরা। সে জন্য স্বামী তাকে বৈধ তালাক দেয়। সে সময় পাশে দাঁড়ানোর মত কেউই ছিল না। নিরাপত্তার কারনে ২য় বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েও কোন আশার আলো দেখা মেলেনি। বাধ্য হয়ে নিজের একান্ত প্রচেষ্টায় বাড়িতে হাঁস-মুরগী ও গাভী পালন করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। বর্তমান তাহেরার এক কন্যা সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে অনার্স এবং অপরজন ১ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। পূর্বের তুলনায় সংসারে অনেক উন্নয়ন হয়েছে তার। বেড়েছে সমাজের গ্রহণ যোগ্যতাও।

সংগ্রাম করে চলছে খাদিজার জীবনযাত্রা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া গ্রামের রবিউল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা পারভীন। সংগ্রাম করে চলছে যার জীবন সংগ্রাম। নিজের ভাগ্যর পরিবর্তন ঘটতাতে প্রথমে সার্স (এনজিও)তে জনসংগঠক হিসাবে দর্জি বিজ্ঞান স্কুলের ট্রেনার হিসাবে কাজ শুরু করে সে। তারপর প্রগতি সমবায় ঋনদান সমিতিতে মাঠ কর্মী হিসাবে কাজ করে খাদিজা। একই সাথে উত্তরণের সফল প্রকল্পের নিউট্রিশন পাটে কাজ করছেন তিনি। বর্তমানে ব্লাডপ্রেশার মাপাযন্ত্র, ডায়বেটিক্স পরীক্ষা মেশিন, ওজন মাপক যন্ত্র অছে। যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে থাকে। এছাড়া কিশোরী মেয়েদের স্বাস্থ্য সেবার উপর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।