অবাক হওয়ার মতো কথা হলেও, এই বিশ্বাস কিংবা কুসংস্কারটি কিন্তু এখনও বহু মানুষদের মধ্যে পাওয়া যায়৷ এবং এর জন্য ওঝারাই দায়ি, বলছেন ওয়াকিবহাল মহল৷
পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গত মাসে ১৮ বছর বয়সি শঙ্করী মাহাতোকে কুকুরে কামড়েছিল৷ কিন্তু ডাক্তারের কাছে না গিয়ে শঙ্করী যায় পাশের গ্রামের এক ওঝার কাছে৷
সে গ্রামের ৭০ বছর বয়সি ওঝা বুদ্ধেশ্বর সিং মেয়েটিকে জড়িবুটি মেশানো দই-চিঁড়ে খেতে দেন এবং বলেন যে, ঐ খেলেই তাঁর আর কুকুরের কামড় থেকে কোনো অসুখবিসুখ করবে না৷ খবর ডয়চে ভেলের।
শঙ্করী মাহাতোর বক্তব্য: ‘‘আমরা জানি, কুকুরে কামড়ালে মানুষের পেটে কুকুরের বাচ্চা হয়৷ তা থেকেই জলাতঙ্ক ঘটে আর মানুষ মরে যায়৷ ওঝা যে ওষুধ দিয়েছে, তার জন্যেই আমি বেঁচে গেছি৷”
শঙ্করীর মা মালতী মাহাতো জানান যে, তাঁকেও বছর আটেক আগে কুকুরে কামড়েছিল এবং তিনি বুদ্ধেশ্বর সিং-এর ওষুধ খেয়ে সেরে ওঠেন৷
ডাক্তারি শাস্ত্রে নিরক্ষর, সরল মানুষজনের এই অদ্ভুত বিশ্বাসটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘পাপি প্রেগন্যান্সি সিনড্রোম’ বা পিপিএস অর্থাৎ ‘পেটে কুকুরের বাচ্চা রোগ’৷
পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তিশগড় ইত্যাদি রাজ্যে হাজার হাজার মানুষ এই আজগুবি রোগের কথা বিশ্বাস করেন৷
মনস্তত্ত্ববিদ কুমার কান্তি ঘোষ প্রায় দু’দশক ধরে পিপিএস নিয়ে গবেষণা করেছেন৷ তিনি বলেন, আসলে এই কুসংস্কারের পিছনে রয়েছে গণ-হিস্টিরিয়া৷
মালদা সরকারি হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান ড. ঘোষ বলেন, তাঁদের হাসপাতালে তাঁরা একাধিকবার পিপিএস-এর ঘটনা দেখেছেন৷ পেট পরীক্ষা করে কিছুই না পাওয়া যাবার পর রোগীদের মানসিক চিকিৎসার জন্য তাঁর বিভাগে পাঠাতে হয়েছে৷
ওঝা বুদ্ধেশ্বর সিং কোনোদিন স্কুল-পাঠশালার মুখ দেখেননি৷ তিনি বলেন, ‘‘কুকুরে কামড়ানোর হপ্তা দুয়েক বাদে পেটে কুকুরের বাচ্চা জন্ম নেয়৷ তারা নাকি পেটের মধ্যেই লাফালাফি, দৌড়োদৌড়ি করে – আর তাদের সঙ্গে রোগীও ছটফট করে৷ জল দেখলে রোগী তাতে ঐ কুকুরের বাচ্চাদের মুখ দেখে৷ তারপর নিজেই চারদিকে ছুটোছুটি করে পাগলা কুকুরের মতো ডাকতে ডাকতে মারা যায়৷”
কুকুরে কামড়ানোর সাত দিনের মধ্যে বুদ্ধেশ্বর সিংয়ের ওষুধ খেলে আর নাকি কুকুরের বাচ্চা জন্মাতে পারে না, আর জন্মালেও ওঝার ওষুধের গুণে সেসব বাচ্চা মারা যায়, রোগীও প্রাণে বেঁচে থাকে৷
এখন প্রশ্ন হলো, নিরক্ষরতা আর কুসংস্কারের কোনো ভালো ওষুধ ডাক্তারদের জানা আছে কিনা৷