ডেস্ক রিপোর্ট: আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদ নির্বাচন পরোক্ষ ভোটে হলেও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের আদলে নির্বাচন পরিচালনা ও আচরণবিধি তৈরি করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে নির্বাচনি প্রচারণায় অন্যান্য নির্বাচনের মতো মাইকের ব্যবহার, পথসভা, জনসংযোগের ব্যবস্থা থাকছে। একইসঙ্গে আইনে অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠানের বিধান না থাকায় নির্দলীয়ভাবে এ নির্বাচন হবে। কমিশন সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনের পরিচালনা ও আচরণবিধি তৈরি করতে বৃহস্পতিবার কমিশন বৈঠকে বসে। বৈঠকে ইসি সচিবালয় প্রস্তাবিত খসড়া আচরণবিধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও চূড়ান্ত করা হয়নি। শনিবার অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনা ও আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। এর আগে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধনী মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সময় স্বল্পতার কারণে সংসদে পাস না করিয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারির পর সরকারের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনের সংশোধিত আইনটি পাওয়ার পর নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। আমরা বৃহস্পতিবার আচরণ ও পরিচালনা বিধি তৈরির জন্য বৈঠক করেছি। বৈঠকে আচারণবিধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শনিবার কমিশন আবার বসবে। আশা করা যায়, ওই বৈঠকে দু’টো বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।’ এদিকে, কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনটি পরোক্ষ হলেও এর আচারণবিধি প্রত্যক্ষ নির্বাচনের আদলে করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণের সরাসরি ভোটে যেভাবে সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে চালাতেন, পরোক্ষ নির্বাচনেও সেই ধরনের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে ইসি সচিবালয় থেকে। নির্বাচনে মাইকের ব্যবহার, পথসভা, পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার ইত্যাদিও জেলার সর্বত্র লাগানোর সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা। তবে বিষয়টি নিয়ে একাধিক কমিশনার ভিন্নমত পোষণ করেন বলে জানা গেছে। পরোক্ষ নির্বাচন হওয়ায় এতে মাইকের ব্যবহার না রাখার সুপারিশ করেন একাধিক কমিশনার। পরে বিষয়টি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে না পৌঁছে বৈঠক শনিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। সংধোধিত আইনে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে দলীয় মনোনয়নে অনুষ্ঠানের কোনও বিধান যুক্ত না করায় নির্দলীয়ভাবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে দলীয় প্রতীকেরও কোনও ব্যবহারের সুযোগ থাকছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘আইনে যেহেতু দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়নি, সেহেতু এই নির্বাচন নির্দলীয়ই হবে। সেই আদলেই আমরা বিধিমালা তৈরি করছি।’
বিধিমালায় আরও যা থাকছে নতুন নির্বাচন পরিচালনা বিধি অনুযায়ী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একজন প্রার্থীর সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা খরচের বিধান রাখা হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তিগত খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে সর্বোচ্চ একলাখ এবং ব্যক্তিগত খরচ ১০ হাজার টাকা। জামানত হিসেবে চেয়ারম্যান পদে ৫০ হাজার এবং সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে পাঁচ হাজার টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচনের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে), মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হবে। আর নির্বাচনে দু’জন প্রার্থী সমান অর্থাৎ সমভোট পেলে পুনঃভোট হবে না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) লটারির মাধ্যমে বিজয়ীকে নির্ধারণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই আগামী ডিসেম্বরে দ্বিতীয়ার্ধে এই নির্বাচনটি হতে পারে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচনের সময় প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগুচ্ছি। দেখা যাক কতদূর এগুতে পারি।’ জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রত্যেক জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। এই ১৫টি ওয়ার্ড থেকে ১৫ জন সদস্য নির্বাচিত হবে। এই ১৫টি ওয়ার্ডকে পাঁচটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। নারী-পুরুষ সদস্য মিলিয়ে এসব ওয়ার্ড থেকে মোট ২০জন সদস্য ও একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। এর মধ্যে ২০ জন সদস্য নির্বাচনের জন্য কোনও কোনও উপজেলায় এক বা একাধিক ওয়ার্ড করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এই নির্বাচনে ভোট দেবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার ইউনিয়ন পরিষদে। দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা চার হাজার ৫৭১টি। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যা গড়ে ১৩ জন করে ৬০ হাজারের মতো। এভাবে ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে প্রায় দেড় হাজার, ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে পাঁচ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন। প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর; উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান; পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিল ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিল এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের নিয়ে এই নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হবে।