রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) যে আপত্তি জানিয়েছিল তা তুলে নিয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। রামপালের কারণে সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য হুমকির মধ্যে থাকা তালিকা থেকেও সুন্দরবনকে বাদ দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রামপালের বর্তমান অবস্থান সুন্দরবনের জন্য কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না বলেও জানিয়েছে ইউনেস্কো। পোল্যান্ডের ক্র্যাকোভে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ৪১তম অধিবেশনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা ডক্টর তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন ওই অধিবেশনে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ বছর এই গৌরব অর্জনের ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হবে। সুন্দরনের কাছে রামপালে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের শুরু থেকেই পরিবেশবাদীরা এর বিরোধীতা করে আন্দোলন করে। ২০১৬ সালের শুরুতে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির দৃষ্টিগোচর হয় রামপাল ইস্যু। সুন্দরবনের তখনকার অবস্থা এবং বনের ওপর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খতিয়ে দেখতে গত বছরের মার্চে ডব্লিউএইচসি ও আইইউসিএনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছিলো। তারা রামপাল প্রকল্প স্থান, সুন্দরবন ঘুরে এবং সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নিয়ে গত বছরের জুনে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে রামপালকে সুন্দরবনের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে উল্লেখ করা হয় এবং প্রকল্পটি বাতিল করে অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে বলা হয়। এরপর ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে রিপোর্ট প্রকাশ করে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানায়। এ নিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র ও আইইউসিএন যৌথভাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো। সেখানে বলা হয়েছিলো, সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষিত স্থান থেকে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে কয়লাভিত্তিক এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে, যা সুন্দরবনের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। দীর্ঘ আলাপ আলোচনা করে বিশ্ব ঐহিত্য কমিটি এই সিদ্ধান্তে আসে যে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র তার বর্তমান অবস্থানে নির্মিত হলে কোন ক্ষতি হবে না। এর সঙ্গে তারা বেশ কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়ের প্রশমনের পরামর্শ দেয়। ২০১৬ সাল থেকে সুন্দরবনকে রক্ষায় গৃহীত বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপকে তারা স্বাগত জানায়। কমিটির অনুরোধে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে স্ট্রাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল এসেসমেন্ট (এসইএ) শুরু করতে সম্মত হয় বাংলাদেশ।