মাহফিজুল ইসলাম আককাজ : বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা সার্কেল ১ বছরে ২৩ কোটি ৩৬ লক্ষ ৯৩ হাজার ৩শ ৩৫ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে (জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০১৭পর্যন্ত) জেলার বিভিন্ন সড়কে রেজিষ্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স’র জন্য যানবাহনে অভিযান চালিয়ে এ রাজস্ব আদায় করা হয়। শনিবার সকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ চৌধুরী এ তথ্য জানান। তানভীর আহমেদ আরো জানান, এ অর্থ বছরে সাতক্ষীরা সার্কেলে মোট ১৮ হাজার ৬শ ৫৬ টি মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে। শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে ১০ হাজার ৭শ ৭০টি। ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে ৮হাজার ৫শ ১৭টি। নবায়ন করা হয়েছে ৩শ ৩৯টি। ফিটনেস সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে ১১৪টি এবং নবায়ন করা হয়েছে ৪৮২টি। রুট পারমিট ইস্যু করা হয়েছে ৮৫টি এবং নবায়ন করা হয়েছে ১৬৭টি। ডিজিটাল রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিজিটাল ব্লু বুক) বিতরণ করা হয়েছে ৬৪৩৮টি। এছাড়া ভ্রাম্যমান আদালতে ১২৩ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে ৯০ হাজার ৪শ টাকা। বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেল সূত্রে জানা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করতে গ্রাহককে প্রথমে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হয়। এরপর ২ মাস পরে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট দিতে হয়। উত্তীর্ণ হলে নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি প্রদান করে আবেদন করতে হয়। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আগুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। স্মার্ট কার্ড গ্রহণের জন্য গ্রাহককে এস.এম.এস এর মাধ্যমে অবহিত করা হয়। মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন করতে সেবা গ্রহণকারীকে বিআরটিএ অফিসে নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মোটরযানের জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে সঠিক পাওয়া গেলে গ্রাহককে প্রয়োজনীয় রেজিস্ট্রেশন ফি জমা প্রদান করতে একটি এ্যাসেসমেন্ট স্লিপ প্রদান করা হয় এবং ফি জমা প্রদানের পর গাড়িটি বিআরটিএ অফিসে হাজির করতে অনুরোধ করা হয়। গাড়িটি পরিদর্শন করার পর মোটরযান পরিদর্শকের সুপারিশ সাপেক্ষে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনের অনুমোদন প্রদান করা হয় এবং সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরপূর্বক গ্রাহককে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট সরবরাহ করা হয়। এছাড়া বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেল অফিসে মোটরযানের রুট পারমিট ইস্যু ও নবায়ন, মোটরযানের ফিটনেস ইস্যু ও নবায়ন, মোটরযানের ট্যাক্স টোকেন ইস্যু ও নবায়ন, মোটরযানের হাই সিকিউরিটি উইন্ডশিল্ড স্টিকার (ডিকল) ইস্যু ও নবায়ন, বিনামূল্যে মোটরযান ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত যে কোন ধরনের আবেদনপত্রের প্রাপ্যতা, মোটরযান সংক্রান্ত পরিসংখ্যান, সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান, ইন্সট্রাক্টর লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, পরিবহনযানের কন্ডাক্টর লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করা হয়। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা একাধিক গ্রাহক জানান, লার্নার ও মোটর সাইকেলের কাগজ করতে সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে আগে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা শোনা যেত কিন্তু এখন গ্রাহকরা খুব সহজে অন লাইনে সকল কাজ সম্পন্ন করতে পারে। বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেল অফিসের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ এর উপর মানুষের আস্থা হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির উর্দ্ধে থেকে তানভীর আহমেদ স্যার কাজ করে দিয়েছেন এবং কোন অতিরিক্ত টাকা লাগেনি বলেও জানান তারা। বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সফলতা ও ব্যর্থতা দুটিই রয়েছে। তবে বর্তমানে অনলাইন পদ্ধতিতে এখন ওয়ানস্টপ সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে। চালকদের জন্য সর্বাধুনিক স্মার্ট লাইসেন্স সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা কমবে। ফলে মানুষ প্রতারিত হবে না। এছাড়া সাতক্ষীরা সার্কেলের নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমে গ্রাহকদের সকল অভিযোগ গ্রহণ ও নিস্পত্তি করা হয়। সাতক্ষীরা সার্কেল অফিসের সেবার মান মুল্যায়ন করবে গ্রাহকরা। বিআরটিএ’র দালাল দৌরাত্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সব দালালদের সরিয়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হয়। এছাড়া যে কোন অভিযোগের ক্ষেত্রে হট লাইন নাম্বারে (০১৯৬৬৬২২০৭৭) গ্রাহকরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবে। জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন ও সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। সকল প্রকার সেবা অন লাইনে প্রদানের ফলে বিআরটিএ অফিসে এসে এখন আর মানুষকে হয়রাণি হতে হয়না। এছাড়া জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে বিআরটিএ’র টাকা জমা দেওয়ার জন্য একটি বুথ চালু করা হয়েছে। এছাড়া ইতিমধ্যে বিআরটিএ’র জন্য জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ভবন করতে পারলে সাধারণ মানুষ আর হয়রাণীর স্বিকার হবেনা। এছাড়া আগে বিআরটিএ’র পরীক্ষাগুলো মাসে ১বার নেওয়া হতো এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে নেওয়া হবে। ডিজিটাল নাম্বার প্লেট দেওয়া হতো প্রতি মাসে, এখন তা প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে। এভাবে আগের তুলনায় সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ অনুসারে বিআরটিএ গঠিত হয়। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সৃষ্টির পর থেকে সড়ক পরিবহন সেক্টরের সার্বিক তত্তাবধান, ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কাজ করে আসছে। বর্তমান সরকারের আমলে সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃংখলা ও গতি আনয়নের লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা সার্কেল। সময়োপয়োগী গৃহীত এ সকল পদক্ষেপের ফলে একদিকে যেমন রাজস্ব আদায়ের মাত্রা গড়ে পরবর্তী বছরগুলোর তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে গ্রাহক সেবার মান দিন দিন উন্নত হচ্ছে।