এম বেলাল হোসাইন/হাসান হাদী : বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু মুক্তামনির সু-চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ সরকার। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি ইতিমধ্যেই উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে তার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। সোমবার দুপুরের দিকে মুক্তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর গতকাল রাতেই সরকারি এ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এসময় তাকে বিদায় জানাতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. তহিদুর রহমান, প্রথম আলো’র নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি, সাতক্ষীরা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান মাসুম ও ডেইলি সাতক্ষীরা’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হাসান হাদী। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে মুক্তামনির চিকিৎসার বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর নিতে সোমবার বিকালে সেখানে উপস্থিত হন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আ ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, জেলা পরিষদ সদস্য এড. শাহানাজ পারভীন মিলিসহ অনেকেই। সোমবার সকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. তহিদুর রহমান, ডেইলি সাতক্ষীরা’র সম্পাদক ও দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম, সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল হোসেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ এর ফরেনসিক মেডিসিনের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীন, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসান হাদী, সাংবাদিক আব্দুল জলিল, এম বেলাল হোসাইন, মোস্তফা আলী ও প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা আনছার হাজী। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নেতৃবৃন্দ আক্রান্ত শিশু মুক্তামনির সার্বিক খোঁজ খবর নেন এবং তার পরিবারকে চিকিৎসার আশ্বস্ত করেন। এসময় ডা. নাসির সকলকে মুক্তামনির রোগ সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, “বিশ্বের মধ্যে ২ জন বৃক্ষ মানব ছিলেন। তাদের মধ্যে ১ জন ইন্দোনেশিয়ায় আরেকজন বাংলাদেশের আবুল বাজানদার। তার চিকিৎসা বাংলাদেশেই হয়েছে। সুতরাং মুক্তা মনির চিকিৎসাও বাংলাদেশে হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ বা বিএসএমএমইউ-তে বিশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করে মুক্তামনিকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।” তিনি আরও বলেন, “মুক্তামনির এ রোগটি বিরল। প্রাথমিকভাবে বলা যায় এর নাম হাইপারকেরাটসিস। সর্বশেষ যে টেস্ট রিপোর্ট আমাদের হাতে এসেছে তাতে করে মনে হচ্ছে এটি ক্যান্সার নয়। এটি জটিল হলেও নিরাময়যোগ্য।” বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনিকে দেখতে গিয়ে সোমবার সকাল ১১টায় সদর উপজেলার বাঁশদহা ইউনিয়নে কামারবায়সা গ্রামের তার বাড়িতে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, “আমার মুক্তামনির বিষয়ে গণমাধ্যমে জানতে পেরেই প্রথমে উপমহাদেশের বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক আমাদের সাতক্ষীরারই মানুষ অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি-কে বিষয়টি জানাই। তিনি রবিবার রাতেই ই-মেইলে মুক্তামনির ছবি এবং রিপোর্ট পাঠাতে বলেন। সবকিছু দেখে তিনি মুক্তামনিকে অবিলম্বে ঢাকায় নেয়ার কথা বলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের কল্যঅণে বিষয়টি ইতিমধ্যে সকলের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। নিশ্চয়ই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আনুকূল্যও আমরা পাব। তিনি শিশুদের বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং মানবিক। ডা. রুহুল হক প্রধানমন্ত্রীর সাথে এ বিষয়ে কথাও বলবেন। মুক্তামনির চিকিৎসার কোন ক্রটি হবে না।” তিনি আরো বলেন, “বিনা চিকিৎসায় তার পিতার কোল শূন্য না হবে না। আমিও সন্তানের পিতা। সন্তানের মুখের হাসি দেখলে যে সুখ যাওয়া যায়। পৃথিবীর আর কোন কিছুতেই সে সুখ পাওয়া যায় না।” এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিশু মুক্তাকে দ্রুত সদর হাসপালে ভর্তি করে নিয়ম অনুযায়ী ঢাকায় স্থানান্তরের জন্য সাতক্ষীরার সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী সিভিল সার্জন সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে মুক্তামনিকে করে এ্যাম্বুলেন্স যোগে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। অন্যদিকে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম এ খবর শুনে দ্রুত সদর হাসপাতালে পৌছান শিশু মুক্তাকে দেখতে। সেখানে পৌছে তিনি তার সু-চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের সু-দৃষ্টি কামনা করেন এবং তার পিতা-মাতাকে সান্তনা প্রদান করেন। এসময় সিভিল সার্জনসহ অন্যান্য চিকিৎসকগণ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।