দৌলতদিয়া যৌনপল্লির এক যৌনকর্মীর দায়ের করা মামলায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মাহাবুব রাব্বানীকে (৪২) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে পুনরায় জামিন আবেদন করেন মাহাবুব। আদালতের বিচারক আবেদনটি নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া যৌনপল্লির একজন যৌনকর্মী নিজেকে গোলাম মাহাবুব রাব্বানীর স্ত্রী এবং তাঁদের নয় বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে বলে দাবি করে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় মাহাবুব হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের নেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে মাহবুব দুপুরে আইনজীবীর মাধ্যমে রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করেন। এর আগে আদালত এ বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে নির্দেশে দিয়েছিলেন। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মামলার তদন্তের জন্য অভিযুক্ত গোলাম মাহাবুব রাব্বানীকে নোটিশ দিয়ে হাজির হতে বললে তিনি লোক মারফত সময় নিয়ে কালক্ষেপণ করলেও হাজির হননি। তদন্তে প্রতীয়মান হয়, যৌনপল্লিতে আসা-যাওয়ার সুবাদে কয়েক বছর আগে গোলাম মাহাবুব রাব্বানীর সঙ্গে এক যৌনকর্মীর সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে এবং তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। অতঃপর ওই যৌনকর্মীর গর্ভে একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে। এ ছাড়া তিনি যৌনপল্লি থেকে অন্যত্র বসবাসের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েটির যৌনপল্লিতে থাকা মায়ের বাড়ি বিক্রি করাসহ ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে স্ত্রী ও সন্তানের মর্যাদা না দিয়ে তাঁকে নানাভাবে নির্যাতন করতেন।’
তবে, গোলাম মাহবুবের স্ত্রী গোয়ালন্দ পৌরসভার কাউন্সিলর আফরোজা রাব্বানী সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, কয়েক বছর আগে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুলহাসকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে। জুলহাস ছিল মাহবুবের চাচাতো ভাই। এ নিয়ে দৌলতদিয়া ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মণ্ডলের সঙ্গে মাহবুবের বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই বিরোধের অংশ হিসেবে দৌলতদিয়া যৌনপল্লির একজন যৌনকর্মী দিয়ে আদালতে মিথ্যা মামলা করা হয়। যে মামলায় মাহবুবকে কারাগারে যেতে হলো।
সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) উজির আলী শেখ বলেন, যৌনকর্মীর দায়ের করা মামলায় মাহাবুব রাব্বানী উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের জামিন নেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে উচ্চ আদালত তাঁকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। মেয়াদ শেষ হওয়ায় আজ তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।