জুলফিকার আলী: সাতক্ষীরা সদরের বাঁশদহা ইউনিয়নে হতদরিদ্রের জন্য সরকার নির্ধারিত মুল্যে উপকারভোগীদের নামের তালিকায় ব্যপক অনিয়ম হয়েছে। সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত ১০৮২টি কার্ডের বিপরীতে উপকারভোগীদের নামের তালিকায় অধিকাংশ বিত্তবান ও কোটিপতিদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বাদ যায়নি চেয়ারম্যান মেম্বরদের ভাই, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি নিজের স্বামী-স্ত্রীর নামও। কেবল বাদ পড়েছে অধিকাংশ ভিক্ষুক, অসহায়, বিধাবা ও দিনমুজুরদের নাম। এদিকে বিত্তবানরা ১০টাকায় চাউল কিনে গরু ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করবেÑ এমন কথাই বললেন কার্ডধারী একজন। সূত্র জানায়, ২০ জুলাই বাঁশদহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম মোশাররফ হোসেন ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার সাহা হতদরিদ্রদের তালিকা প্রস্তুত করে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এর নিকট প্রেরণ করে।ঐ তালিকায় বাঁশদহা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বরের ছেলে আজাদ, ভাই সিরাজ শালিকা মনজিলা, শ্যালকের বউ চামেলী, বিদেশ প্রবাসী রাশিদুল, দুইতলা বাড়ির মালিক হৃদয়মোশাররফ চেয়ারম্যানের ভাই সোহারাফ, ৩ নং ওয়ার্ডে তোবারেকের ছেলে আমছার চেয়ারম্যানের আত্মীয় আরশাদ, রোস্তম, মোস্তফা, আব্দারের ছেলে মিঠু বজলুর ছেলে আলতাফ, আফজাল, ছবেদ আলী মেম্বরের স্ত্রী মাজিদা, ৪নং ওয়ার্ডে ইন্দ্রজিৎ মন্ডলের ছেলে বিমল মন্ডল, অজিত মন্ডলের ছেলে পরিমল মন্ডল, ৫ নং ওয়ার্ডে আতাউর (বিদেশ প্রবাসী), হোসেনের ছেলে মনি(পুলিশে কর্মরত), ৭ নং ওয়ার্ডে মৃত আনিছ মোল্লার ছেলে জাহাঙ্গীর, মোশাররফ মেম্বরের ভাই সাজ্জাদ, শাহাদাত (জুয়েলারির দোকানদার), আফজাল হকের ছেলে রফিকুজ্জামান(বিশিষ্ট ব্যবসায়ী), করিম বক্সের ছেলে আলম(বিদেশ প্রবাসী), মহিলা মেম্বর সাবিনা ইয়াসমিনের স্বামী আব্দুল গনি, আজিহার সরহমানের ছেলে আবুল কালাম(ছেলেরা চাকরীজীবী)-সহ অধিকাংশ বিত্তবান ব্যক্তির নাম রয়েছে। কিন্তু ১ নং ওয়ার্ডে সাইফুল, আসানুর, নুরুল, সহিদ, মতিয়ার, ৫ নং ওয়ার্ডে অহিদের স্ত্রী জুলিখা(বিধবা), ২ নর্ং ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর, রবিউল, সালাম, আনার, হাসান, ৭ নং ওয়ার্ডে টোলি(ভিক্ষুক), পেঙ্কী(ভিক্ষুক), ইয়ার আলী (ভিক্ষুক)জিয়ারুল, মিজানুর, মহাসিন, গনিসহ প্রত্যেক ওয়ার্ডে অসংখ্য ব্যক্তি যারা পাওয়ার যোগ্য তারা হয়েছেন বঞ্চিত। ইউপি চেয়ারম্যান এস এম মোশাররফ হোসেন সরকার দলীয় চেয়ারম্যান হওয়ায় নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর থেকে একাধিক দুর্নীতি ও অনিয়ম করলেও তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তবে বিভন্ন জায়গায় এসকল বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে এমনকি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক নেতা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদা জনগণকে ১০টাকায় চাউল দেয়াÑ এটি যেন পূরণ হয় তার জন্য বিষয়টি তদন্ত করে সঠিক ব্যক্তি যাতে তালিকায় স্থান পায় তার ব্যবস্থা করতে পত্রিকার মাধ্যমে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। এ বিষয়ে বাঁশদহা ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার সাহা জানান, চেয়ারম্যান বলেছে চাউলের কার্ড কেউ নিতে চাইনা, জোর করে নাম দিতে হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ তালিকা প্রস্তুত করেছে তবে আমার উচিত ছিল যাচাই বাছাই করা। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, হতদরিদ্র ছাড়া ঐ তালিকায় বিত্তবানদের নাম থাকার কোন সুযোগ নেই। এলাকায় একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে তদারকির জন্য। তার পরও যদি নিয়মের ব্যতিক্রম হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এব্যাপারে জানার জন্য ইউ,পি চেয়ারম্যান এস,এম মোশাররফ হোসেন এর ০১৭১৩-৭৩৭১৫১মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এ ব্যপারে সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন হতদরিদ্র বাঁশদহা ইউনিয়নবাসী।