ডেস্ক রির্পোট : ‘ছোট ভাই আল-আমিনের বয়স দেড় বছর। কেবল কথা বলতে শিখেছে। আমাকে আপা বলে ডাকে। কিন্তু কপাল খারাপ হাতের কারণে তাকে একবারের জন্যও কোলে নিতে পারিনি। হাতটা ঠিক হলে প্রথমে তাকে কোলে নেব।’ আবেগাপ্লুত হয়ে এভাবেই নিজের ইচ্ছার কথা জানায় সাতক্ষীরার ‘বিরল রোগে’ আক্রান্ত এবং বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুক্তামণি। বুধবার সকালে ঢামেক বার্ন ইউনিটের ৬০৮ (এ-বি) কেবিনে শুয়ে থাকা মুক্তার সঙ্গে কথা হয়। মুক্তা বলে, ওর (ছোট ভাই আল-আমিন) কান্না শুনি, কথা শুনি। তবে একদিনের জন্যও কোলে নিতে পারিনি। দোয়া করবেন যাতে হাত ভালো হয় এবং আল-আমিনকে কোলে নিতে পারি। এর আগে মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে আনা হয় মুক্তাকে। সেখানে দু’দিন ধরে তার বিভিন্ন টেস্ট করেন চিকিৎসকরা। গত দু’দিনে হাতে একাধিকবার ড্রেসিংয়ের কারণে প্রচ- ব্যথা অনুভব করছে সে। মুক্তা জানায়, আগে একা একা টয়লেটে যেতে পারতাম, এখন তাও পারি না। ব্যথায় গত রাতে ঘুমাতে পারিনি। বুধবার সকালে বার্ন ইউনিটের ষষ্ঠ তলার কেবিনে গিয়ে ব্যথায় কাতর হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায় মুক্তাকে। ঢামেক বার্ন ইউনিটের নার্সরা তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রক্ত সংগ্রহ করছেন। তবে রক্তশূন্যতার কারণে বাম হাতের কয়েকটি পয়েন্টে সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে রক্ত সংগ্রহে ব্যর্থ হন চিকিৎসকরা। ব্যথায় যখন মুক্তা কান্না করছিল তখন গামছা দিয়ে তার মুখ ঢেকে রাখেন বাবা-মা। সকাল থেকে তিনবার মুক্তাকে দেখতে এসেছেন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। একে একে ঘুরে গেছেন মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরাও। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মুক্তার হাতের রোগসহ তার শরীরের মোট ওজন ২৪ কেজি। মুক্তার বাবা ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার জন্য আজ মেয়ের এ অবস্থা। দেরিতে হলেও তার যে সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি। এখন একটাই চাওয়া, আল্লাহ যেন তাকে সুস্থতা দেয়। সে যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার, দেশবাসী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’ হাসপাতালে মুক্তার সঙ্গে তার বাবা-মা ছাড়াও জমজ বোন হিরামণি এবং দেড় বছরের ছোট ভাই আল-আমিন রয়েছে। বোনের সুস্থতার অপেক্ষায় থাকা হিরামণি বলে, আমি চাই মুক্তা সুস্থ হয়ে আমার সঙ্গে খেলাধুলা করুক। মেয়ের সুস্থতায় বুক ভরা আসায় আছেন মা আসমা। তিনি বলেন, চিকিৎসকরা মুক্তার সুস্থতা নিয়ে আশাবাদী। গত দেড় বছরে এরকম কথা আর কেউ বলেনি। কেবিন থেকে চলে আসার আগে চোখ ছোট করে মুক্তা বলে, আমার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। আমি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারি। মুক্তার চিকিৎসার বিষয়ে চিকিৎসকরা আশাবাদ জানালেও ‘অনেক দেরি হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢামেকের ঊর্ধ্বতন এক চিকিৎসক। তার প্রকৃত রোগের বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলেও জানান চিকিৎসকরা।