পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে আনা সর্বশেষ দুর্নীতির অভিযোগটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফন্টগেট’। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড প্রোগ্রামের একটি টাইপ ফন্ট ‘ক্যালিব্রি’। এই ফন্টটি কবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল, তার ওপর নির্ভর করছে নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে এই মামলার ভবিষ্যৎ। আগামী সপ্তাহে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারক মিলে তদন্তকারীদের রিপোর্টের ভিত্তিতে এই মামলার ব্যাপারে তারা রায় দেবেন।
বিবিসি জানায়, গত বছর ‘পানামা পেপার্স’ ফাঁস হওয়ার পর পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক, যার মধ্যে নওয়াজ শরীফও কিছু অফশোর একাউন্টের সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানা যায়। এরপর থেকে পাকিস্তানের বিরোধী রাজনীতিকরা অভিযোগ করছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করে সেই অর্থে লন্ডনে দামী ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল। একদল তদন্তকারী এখন এই দুর্নীতির ঘটনা তদন্ত করছে। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে নওয়াজ শরীফ প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন।
এই তদন্তে যে প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা হচ্ছে তা হলো, সেন্ট্রাল লন্ডনে দামী ফ্ল্যাটগুলো যে অফশোর কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কেনা হয়েছে, সেই কোম্পানিগুলোর মালিক কে? পানামা পেপার্সে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে নওয়াজ শরীফের মেয়ে মারিয়াম নওয়াজ এর মালিক। মারিয়াম নওয়াজই তাঁর পিতার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারি হিসেবে দলের হাল ধরবেন বলে মনে করা হয়। তবে মারিয়াম নওয়াজ দাবি করছেন, তিনি এই কোম্পানির ট্রাস্টি মাত্র। এর স্বপক্ষে তিনি প্রমাণও পেশ করেছেন।
এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু তিনি যে দলিল পেশ করেছেন, সেটি সই করা হয়েছে ২০০৬ সালে। কিন্তু তদন্তকারীরা বলছেন, মাইক্রোসফটের যে ফন্ট ব্যবহার করে দলিলটি টাইপ করা হয়েছে, সেই ক্যালিব্রি ফন্টটি ২০০৬ সালে সাধারণের ব্যবহারের কোন সুযোই ছিল না। এটি উন্মুক্ত করা হয় ২০০৭ সালে। ফলে তদন্তকারীদের মতে, এই দলিলটি আসলে জাল। তারা মারিয়াম নওয়াজের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনছেন। তবে মারিয়াম নওয়াজ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
টাইপোগ্রাফি বিশেষজ্ঞ থমাস ফিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন, যদিও ক্যালিব্রি ফন্টের বেটা ভার্সন ২০০৪ সাল থেকে পাওয়া সম্ভব ছিল, কিন্তু এটি সাধারণ ব্যবহারকারীদের ব্যবহারের ডাউনলোডের ঘটনা হবে খুবই বিরল এক ঘটনা। ফন্টটি যিনি তির করেছেন, সেই লুকাস ডে গ্রুটও একই মন্তব্য করেছেন।
কিন্তু এরই মধ্যে উইকিপিডিয়ায় এই ক্যালিব্রি ফন্টের ইতিহাস নিয়ে শুরু হয়ে গেছে রহস্যময় সব ঘটনা। পাকিস্তানে এই দুর্নীতির মামলায় ক্যালিব্রি ফন্টের বিতর্ক শুরু হওয়ার পর দেখা গেল উইকিপিডিয়ায় ক্যালিব্রি ফন্টের ইতিহাস বার বার এডিট করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে উইকিপিডিয়ার কর্তৃপক্ষ ক্যালিব্রি ফন্টের পাতাটির সম্পাদনার সুযোগ আপাতত বন্ধ করে দিয়েছেন।