‘সবাই বলছেন আমি সুস্থ হয়ে যাব। আঙ্কেল (স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম), ডাক্তার, বাবা-মাও বলছেন আমার হাত ভালো হয়ে যাবে। আর হীরামনিও। ওই আঙ্কেল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার দায়িত্ব নিয়েছেন। আমার অনেক ভালো লাগছে, সাহস পাচ্ছি। সুস্থ হয়েই প্রধানমন্ত্রী আন্টির কাছে যাব। আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বলব, আমি ভালো হয়ে গেছি।’ বলছিল বিরল রোগে আক্রান্ত ১১ বছরের শিশু মুক্তামনি। পাশে দাঁড়িয়ে অঝরে কাঁদছিল তার যমজ বোন হীরামনিও। ১১ জুলাই থেকে মুক্তামনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছে। তাদের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবাইশা গ্রামে। শনিবার ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ৬ তলার ৬০৫ নম্বর কেবিনে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তামনির চুল আঁচড়িয়ে দিচ্ছে হীরামনি। কখনও মুখে তুলে দিচ্ছে ফল, পানি। মুক্তার ডান হাতের ওজন প্রায় ৮ থেকে ৯ কেজি। বাম হাতে স্যালাইন লাগানো। দুপুরের দিকে জাতীয় বার্ন ইউনিটের উপদেষ্টা ও সাবেক পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন মুক্তামনির কাছে ঘণ্টাখানেক সময় কাটান। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বুধবার এ ইউনিটের পরিচালক ডা. আবুল কালামকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট চিকিৎসক বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সে অপুষ্টিতে ভুগছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ডা. জুলফিকার আলী লেনিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন। তার খোঁজখবর রাখছেন তিনি। ইতিমধ্যে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল এমপি এবং বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও তাকে দেখে গেছেন। মুক্তামনিকে যথাযথ চিকিৎসা দিতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো হবে। তবে আশা করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা দেশেই তাকে সুস্থ করে তুলবেন। মুক্তামনির বাবা ইদ্রিস হোসেন বললেন, ২০০৬ সালের ১৪ জুলাই তাদের যমজ মেয়ের জন্ম হয়। নাম রাখেন মুক্তামনি ও হীরামনি। মুক্তামনির বয়স যখন দেড় বছর তখন তার ডান হাতের বাহুতে ছোট্ট এটি গোঁটা দেখা দেয়। তারপর থেকে এ গোঁটাটি বড় হয়ে হয়ে এ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দিনমজুরের কাজ করে যত টাকা কামাতেন তার অধিকাংশ মেয়ের চিকিৎসায় খরচ করেছেন।গ্রাম্য চিকিৎসক থেকে শুরু করে বহু চিকিৎসকদের কাছে নিয়েছেন মেয়েকে। প্রধানমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা চেয়েছেন মুক্তামনির বাবা। মা আসমা খাতুন বলেন, এ রোগ নিয়েই তাকে স্থানীয় স্কুলে ১ম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাতের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় সে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠতে পারেনি। দুই বোন একই শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল। এখন হীরামনি ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ছে। হাতের ওজনে মেয়ের বুকের হাড় বাঁকা হয়ে কিছুটা নিচে নেমে গেছে। চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে পারেননি। ফলে দিন দিন তার মেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মেয়েটি অনেক লক্ষ্মী ও শান্ত। হাতের তীব্র ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করে। আমরা কাঁদলে সে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, ‘কেঁদো না, আল্লাহ আমাকে ভালো করবেন। তোমরা কাঁদলে আমি অনেক কষ্ট পাই।’ বার্ন ইউনিটের পরিচালক ডা. আবুল কালাম বলেন, বর্তমানে তাকে পুষ্টিকর খাবার ও রক্ত দেয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় তাকে অজ্ঞান করে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। আগামী ৭-৮ দিন পর অস্ত্রোপচারসহ সার্জারি করা হবে। আমরা আশাবাদী, কেননা জটিল রোগের চিকিৎসায় আগেও আমরা সফল হয়েছি। সূত্র: যুগান্তর।