সাতক্ষীরা

আবার ওঠাও বাচ্ছা লটারি, কলারোয়ায় সর্বস্ব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ

By Daily Satkhira

July 18, 2017

আব্দুল জলিল : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আবারও শুরু হয়েছে উঠাও বাচ্ছা লটারি খেলা। আর এই লটারি খেলার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন বলে জানিয়েছে আয়োজকরা। ফলে কোন বাধা নিষেধ ছাড়াই কলারোয়ার চন্দনপুর ফুটবল মাঠে চলছে লটারির নামে জমজমাট জুয়া আর জুয়ার আসরের নাম দেওয়া হয়েছে ঈদ আনন্দ মেলা। ঈদের ১৬ দিন পরে গত ১২ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে আনন্দ মেলা। আর এই মেলার প্রধান আকর্ষণ দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র‌্যাফেল ড্র ও দ্যা এল এন সার্কাস। আর র‌্যাফেল ড্র মঞ্চে নাচ পরিবেশন করছেন ঢাকা, খুলনা, যশোরের মেয়েরা। তবে কিভাবে এই লটারির নামে জুয়া চলছে এর সদুত্তোর দিতে পারিনি কেউ। ২০ টাকার টিকিটে টিভি ফ্রিজ, স্বর্ণের অলংকার, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন পুরুস্কার দেওয়ার কথা প্রচার করে প্রতিদিন শতাধিক ভ্যান, ইজবাইক লটারির টিকিট নিয়ে সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। বিক্রি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার লটারি টিকিট। আর পুরুস্কার দেওয়া হয় মাত্র এক থেকে দুই লক্ষ টাকার। মেলা কমিটি ও র‌্যাফেল ড্র পরিচালকরা এভাবে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আর রাত ১০টার সময় শুরু হয় দৈনিক স্বর্প্নের ঠিকানা র‌্যাফেল ড্র। আর র‌্যাফেল ড্র শুরু হওয়ার আগেই এই মঞ্চে চলে কৌতুক আর নৃত্য। আর কলারোয়ার একটি স্যাটেলাইট টিভি’র অবৈধ চ্যানেলে এই খেলা নিয়মিত দেখাচ্ছে। কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি গ্রামের মিলন, মদনপুর গ্রামের সিরাজ, বুচতলার গফুর জানান, ১২ জুলাই এই দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র‌্যাফেল ড্র শুরু হয়। আর প্রতিটি টিকিটের মুল্য ২০ টাকা। ইতিমধ্যে একজন সেলুন কর্মচারী একটি ফ্রিজ ও নৈশ প্রহরী একটি টেলিভিশন পুরুস্কার পেয়েছেন। আর টিকিট বিক্রি করার সময় প্রচার মাইকে এসব কথা বলে টিকিট বিক্রি করছে। আজকের পুরুস্কার জামাই বাবুর উপহার, শশুর বাড়ির হোন্ডা মোটর সাইকেল, বউয়ের স্বপ্ন স্বর্ণের অলংকারসহ একাধিক পুরুস্কারের কথা বলে প্রতিদিন শতাধিক ভ্যান, ইজিবাইক শহরে, গ্রামে, হাট, বাজারে সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করে। এভাবে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কয়েক লাখ লাখ টাকার টিকিটি। অথচ পুরুস্কার দেওয়া হয় দুই থেকে তিন লাখ টাকার। বাকি টাকা জনপ্রতিনিধি-প্রশাসন-রাজনৈতিক নেতা- দুর্নীতিগ্রস্ত সাংবাদিক থেকে শুরু করে যার যার ভাগ ঠিকমত পৌছে যাচ্ছে। পুরুস্কারের আশায় সর্বস্ব হরাচ্ছে ভ্যান চালক, বউ-ঝি, সাধারণ মানুষ ও স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তলুইগাছা গ্রামের আহম্মদ আলী, কলারোযার গোয়াল চাতর গ্রামের আরশাদ, ফাইন জানান, একি শুরু হল, সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যে টাকা হচ্ছে সেই টাকা দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য না কিনে, কিনছে লটারির টিকিট। আর যখন পুরুস্কার পাচ্ছে না তখন উঠছে মাথায় হাত। বউছিরা হাঁস মুরগি বিক্রি করে আবার কেই কেউ ঘরের চাউল বিক্রি করে এই লটারির টিকিট কিনছে। জানাজানি হয়ে যাওয়ায় সংসারে ঘটছে অশান্তি। স্কুল কলেজেরর ছেলে মেযেরা বিভিন্ন অজুহাতে পিতা মাতার নিকট থেকে টাকা নিয়ে লটারি টিকিট কিনছে। এই তথ্য সংগ্রহ কালে গয়রা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ি এই প্রতিবেদককে জানায়, জেলা প্রশাসন কীভাবে এই সব জুযার অনুমোদন দেয় এটা কল্পনা করা যায় না। একমাস যাবত এই মেলা চললে মানুষের কাছে আর টাকা থাকবে না। এলাকায় অপরাধ বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। করো কিছু করার থাকবে না। কলারোয়ার এলাকার মোশারাফ, সোনাবাড়িয়ার সমসুর, শহিদুল ডাক্তার জানান, শুনেছি জেলা প্রশাসক কলারোয়া উপজেলার মধ্যে দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র‌্যাপেল ড্র টিকিট বিক্রি করতে অনুমতি দিয়েছে। অথচ সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, যশোর জেলার শার্শা উপজেলায় ১শ একটি ব্যারেলে টিকিট বিক্রি হচ্ছে নিয়মিত। এদিকে সার্কাস দেখতে আসা দর্শকরা জানাই, সার্কাস মানে কিছু জীব জন্তু থাকবে। তারা একটু খেলা দেখাবে। সার্কাসের লোকজন কিছু খেলা দেখাবে। সব শ্রেণির লোকজন খেলা দেখতে পারবে। জীবজন্তু কিছু আছে তবে সে দিকে আকর্ষণ কম। কিন্তু যুবতি মেয়েদের নগ্ন নাচ মানে কি সার্কাস ? এমন সার্কাস আগে দেখা তো দূরের কথা নামও শুনেনি। চন্দনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনছার আলী জানান, রমজান মাসে ম্যানেজিং মিটির লোকজন এসে আনন্দ মেলার নামে তার নিকট থেকে একটা ছাড় পত্র নেয়। কমিটির অন্যতম সদস্য শওকাত খা ও অলিয়ার মেম্বর এই মেলার প্রধান। তবে মেলার কথা বলে মেলার নামে দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র‌্যাফেল ড্র বা সার্কাসের নামে অশ্লীল নিত্য হবে এটা জানতাম না। তবে পরে ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ে স্কুলের কিছু জিনিসপত্র কিনে দেবেন বলে জানিয়েছেন। চন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা ইনচার্জ অনুমতি দেওয়ার পর তিনি অনুমতি দিয়েছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ আনন্দ মেলার অনুমতি না দিলে তো আর মেলা বসতো না। ওলিয়ার মেম্বর, শওকাত আলী খাঁ আর প্রধান শিক্ষক আনছার আলীর নেতৃত্বে চলছে এই মেলা। তিনি এর মধ্যে নেই। কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ জানান, অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসক। দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র‌্যাফেল ড্র বৈধ কি না তিনি বলতে পারবেন। তিনি আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ের প্রধান। কলারোয়া উপজেলা আ ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু জানান, দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র‌্যাফেল ড্র অনুমতি আছে কিনা বলতে পারবো না। তবে অশ্লীল নিত্য হচ্ছে না। সার্কাস শুরু হয়েছে।

এদিকে সাতক্ষীরার নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আবু সাঈদ জানান, মেলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে শর্ত সাপেক্ষে। সেখানে অবৈধ লটারি, জুয়া বা অশ্লীলতার কোন সুযোগ নেই।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দীন জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।