আরিফ মাহমুদ: বাকি মাত্র সপ্তাহ দু’য়েক, সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজার। উৎসব আর আনন্দে মেতে উঠতে প্রস্তত হচ্ছে ছোট থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল বয়সীরা। বছর ঘুরে কয়েক দিনের বড় এ আনন্দের শরিক হতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অনেক উদার মানসিকতার মুসলিম ও খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীরাও যেন অনেকটা উদগ্রীব। দুর্গোৎসবের আয়োজনে শুধু ধর্ম নয় যেন একটি সংস্কৃতির মিলন মেলায় পরিণত হয় সেটা প্রমাণ করতে প্রস্তুত সাতক্ষীরার কলারোয়া জনপদ। দশোহতি মা দুর্গার আগমনী বার্তায় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে বইতে শুরু করেছে উৎসবের আমেজ। ষষ্ঠীতে শুরু হয়ে দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবকে মহাউৎসবে রূপ দিতে প্রস্ততি চলছে। অপরূপ সৌন্দর্যের সাজে সেজে দেবী দুর্গা ভক্তদের কল্যাণে নিহিত হবেন। মহিলা ভক্তরা শঙ্খ-উলুধ্বনি আর মঙ্গল সংগীতে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেবেন। অশুভ শক্তি বিনাশে মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা শ্বশুরালয় থেকে পিতৃগৃহে আগমন করেন। অসুরের শক্তি বিনাশ করে জাগতিক ও পার্থিব শান্তি, জাতির মঙ্গল, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য সনাতন হিন্দু সম্প্রদায় বছরের পর বছর ধরে দেবি দুর্গার আরাধনা ও অর্চনা করে আসছেন। আর তারই ধারাবাহিকতায় এবারো ধুমধাম করে দুর্গোৎসবের আয়োজনে এতটুকু পিছিয়ে থাকতে চাইছেন না কলারোয়ার সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও। এবার উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৩২টি ও পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ৮টিসহ ৪০টি পূজা ম-পে শারদীয় দুর্গোৎসব আয়োজন প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। পারিবারিক ও সার্বজনীন এ পূজা ম-পগুলোতে দুর্গোৎসবের আয়োজনের শেষ প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। যেন এতটুকু দম ফুরোনের সময় নেই। দেবি মা দুর্গাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিমা ইতোমধ্যে তৈরি সম্পন্ন হয়েছে কিংবা কাঁদামাটির প্রলেপের কাজ শেষ পর্যায়ে। চলছে রং-তুলির প্রস্তুতিও। ডিজিটাল ও আধুনিক অনেক প্রযুক্তির ব্যবহারও সংযোজন করা হচ্ছে প্রতিমা ও ম-পগুলোতে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দুর্গা পূজার আয়োজনকে সামনে রেখে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার নিশ্চিত করছে আইন শৃংখলা বাহিনী। জানা গেছে, কলারোয়া পৌর সদরের ঝিকরা হরিতলা পূজা ম-প, গোপিনাথপুর ঘোষপাড়া পূজা ম-প, গোপিনাথপুর দাস পাড়া পূজা ম-প, মুরারীকাটি দক্ষিন পাড়া পূজা ম-প, মুরারীকাটি হরিসভা পূজা ম-প, মুরারীকাটি উত্তর পালপাড়া পূজা ম-প, তুলসীডাঙ্গা ঘোষপাড়া পূজা ম-প, তুলসীডাঙ্গা গোয়ালঘাটা পূজা ম-পে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ৩২টি ম-প ও মন্দিরে দুর্গা পূজার প্রস্তুতি চলছে। উপজেলা পূর্জা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবু মনোরঞ্জন সাহা সাংবাদিকদের জানান, আগামি ৩০ সেপ্টেম্বর শুভ মহালয়া অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দুর্গা পূর্জার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। দেবী দুর্গার ঘোটকে (ঘোড়া) আগমন এবং ঘোটকেই গমন করবেন। আগামি ৭ অক্টোবর থেকে শারদীয় দুর্গোৎসবের মুল পূজা শুরু হয়ে ১১ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মাধ্যমে শেষ হবে। তিনি জানান, দুর্গা পূজাকে ঘিরে এবারের আয়োজনের মধ্যে থাকছে ৭অক্টোবর দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ, ৮অক্টোবর সপ্তমীতে সকালে মহাসপ্তমী, ৯অক্টোবর সকালে দেবীর মহাষ্টমী পূজা আরম্ভ, রাত ১১টা থেকে ১১টা ৫২ মিনিটে সন্ধি পূজা, ১০অক্টোবর পূর্বাহ্নে দেবীর মহানবমী পূজা উদযাপন ও ১১অক্টোবর সকাল ৯টা ৫৩ মিনিটে দশমী পূজা আরম্ভ ও রাতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। উপজেলা পূর্জা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবু সিদ্ধেশ্বর চক্রবর্তী জানান, দেশব্যাপী জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার ফলে একটু ভীতির মধ্যে পূজার আয়োজন করেছেন তারা। তারপরেও পুলিশ প্রশাসন এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল জন সাধারণের সহযোগিতায় শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।