তালা

যশোরের পুলিশ কর্মকর্তা সাতক্ষীরার আজিজের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে হত্যা করে পালানোর অভিযোগ

By Daily Satkhira

July 21, 2017

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে সিআইডি পুলিশের এসআই আজিজুল হক সবুজের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী মরিয়ম খাতুন পারুলকে (৩০) শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নিজ প্রাইভেটকারে করে মরিয়ম খাতুন পারুলের লাশ ফেলে পালিয়ে গেছেন। সেই থেকে এসআই আজিজুল হক সবুজ আত্মগোপনে রয়েছেন। মোবাইল ফোন সেটও বন্ধ রেখেছেন। এসআই আজিজুল হক সবুজ বর্তমানে রাজধানী ঢাকার মালিবাগে সিআইডি পুলিশের সদর দফতরের কর্মরত। তার বাড়ি সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার সরুইলিয়া গ্রামে। পিতার নাম আনারুল ইসলাম। অপরদিকে মরিয়ম খাতুন পারুল যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের চৌঘাটা গ্রামের আজিজুল হকের মেয়ে।

মরিয়ম খাতুন পারুলের ভাই জিয়াউর রহমান জানান, তারা দুই ভাই এবং এক বোন। মরিয়ম খাতুন পারুল সকলের ছোট। প্রায় ১৫ বছর আগে সিআইডি পুলিশের কর্মকর্তা আজিজুল হক সবুজের সাথে তার বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় আজিজুল হক সবুজ কনস্টেবল পদে চাকরি করতেন। বোনের বয়স কম থাকা সত্বেও তিনি এক প্রকার জোর করে তাকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের রাহাতুল হক প্রান্ত নামে একটি ছেলে এবং লাবিবা নামে একটি মেয়ে রয়েছে। রাহাতুল হক প্রান্ত সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র এবং লাবিবা তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, একমাত্র বোন হওয়ায় তারা যশোর সদর উপজেলার রঘুরামপুরে ৭ শতক এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আরো ৭ শতক জমি কিনে দিয়েছেন। এই জমি বোনের নামে। রঘুরামপুরে জমিতে তারা বাড়িও নির্মাণ করে দিয়েছেন। কিন্তু তার ভগ্নিপতি এসআই আজিজুল হক সবুজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন। পরকীয়াতেও তিনি জড়িয়ে পড়েছেন। রাতে বাড়ি ফিরে মাদকের ট্যাবলেট খেয়ে তার বোন মরিয়ম খাতুন পারুলকে নির্যাতন করতেন। বোনের নামের ১৭ শতক জমি তার নামে লিখে দিতে হবে, নয়তো ১৮ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে এভাবে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন চালিয়ে আসছেন এসআই আজিজুল হক। তিনি বলেন, গতকাল বেলা এগারটার দিকে শহরের আর এন রোডে বসবাসকারী তার মামা মাসুদুর রহমানের কাছে মোবাইলে ফোন করেন এসআই আজিজুল হক সবুজের পরিবারের লোকজন। ফোন করে তাকে জানানো হয়, মরিয়ম খাতুন পারুল আত্মহত্যা করেছেন। এরপর তারা মামার কাছ থেকে মরিয়ম খাতুন পারুলের মৃত্যুর খবর পান। স্বজনদের অভিযোগ, এসআই আজিজুল হক দুপুর একটা ১০ মিনিটের দিকে নিজ প্রাইভেটকারে করে স্ত্রীর লাশ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সাথে তার ছেলে ছিলো। এরপর এসআই আজিজুল হক সবুজ দ্রুত হাসপাতালে তার স্ত্রীর লাশ ফেলে পালিয়ে যান।

এদিকে নিহত মরিয়ম খাতুন পারুলের মামা মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, এসআই আজিজুল ইসলাম যশোর সিআইডি অফিসে থাকাকালে ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ফেনসিডিলে আসক্ত হয়ে পড়েন। এছাড়া অন্য নারীর সাথে তার পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল ফোনে অন্য নারীদের সাথে কথা বলতেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনমালিন্য চলছিলো। এছাড়া মরিয়ম খাতুন পারুলের নামে ক্রয়কৃত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের জমি এসআই আজিজুল হক তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য তাকে চাপ দিতেন। রাজি না হওয়ায় মরিয়ম খাতুন পারুলকে নির্যাতন করতেন এসআই আজিজুল হক। এক সপ্তাহ আগে এসআই আজিজুল হক ছুটিতে ঢাকা থেকে যশোরে বাড়িতে আসেন। গতকাল বেলা ১২ টার দিকে তাদের ছেলে প্রান্ত এবং মেয়ে লাবিবা স্কুলে ছিল। এ সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোলাযোগের এক পর্যায়ে আজিজুল হক ঘরের দরজা বন্ধ করে মরিয়ম খাতুন পারুলকে মারধর করেন বলে জানতে পেরেছেন। পরে তাকে গলাটিপে হত্যা করেছেন এসআই আজিজুল হক। ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে মরিয়ম খাতুন পারুলের লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো। মরিয়ম খাতুন পারুলের ভাই জিয়াউর রহমান অভিযোগ করেন, আজিজুল হক সবুজ নিজেই প্রাইভেটকারে করে তার বোনের লাশ হাসপাতালে এনে ফেলে পালিয়ে গেছেন। অপরদিকে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছেন কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের এসআই সোবহান শরীফ। তিনি বলেন, মরিয়ম খাতুন পারুলের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

অন্যদিকে একটি সূত্র জানায়, এসআই আজিুল হক ইতোপূর্বে ডিবি পুলিশে কর্মরত ছিলেন। সেখানেও তার আচরণ ভালো ছিলনা। পরে তিনি সিআইডি যশোর অফিসে বদলি হন। তার নির্যাতনের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে মরিয়ম খাতুন পারুল সিআইডির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসআই আজিজুল হককে যশোর থেকে সিআইডির ঢাকা সদর দফতরে বদলি করা হয়। এদিকে স্বজনদের একটি সূত্র জানায়, মরিয়ম খাতুন পারুলকে হত্যা করায় আজিজুল হকের বিরুদ্ধে তারা থানায় মামলা করবেন। এদিকে এসআই আজিজুল হকের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে (০১৭২৬২৪০৬৯) রিং দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।