জাতীয়

সালমনকে শোকজ করেছিলেন ডিসি, সন্তুষ্ট হননি বিভাগীয় কমিশনার

By Daily Satkhira

July 22, 2017

ন্যাশনাল ডেস্ক : শুধু মামলা নয়, বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারেক সালমনকে তার প্রশাসন বিভাগ থেকেও হেনস্থা করা হয়। শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে কার্ড ছাপানোর ঘটনার পর পরই তাকে বরিশালের জেলা প্রশাসক শোকজ করেছিলেন। আর তার জবাব সন্তোষজনক নয় বলে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার। ইউএনও সালমান তখন বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কর্মরত ছিলেন। এরপর তাকে শাস্তি হিসেবে সেখান থেকে বরগুনা সদরে বদলি করা হয় বলে সূত্র জানায়। সালমানকে শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, ‘কার্ড ছাপার পর কোনও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ওই কার্ড নিয়ে কেবিনেট ও বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারকে জানান। কমিশনার আমাকে বলেন, ওনার (ইউএনও) কাছ থেকে একটা ব্যাখ্যা নাও। আমি তখন তাকে শোকজ করে ব্যাখ্যা নেই এবং বিভাগীয় কমিশনারকে তা পাঠিয়ে দেই। তার ব্যাখ্যা যে সন্তোষজনক নয়, তা আমার কথা নয়, কমিশনারের চিঠির কথা।’

গাজী তারেক সালমানকে জেলা প্রশাসক শোকজ করেন ১৩ এপ্রিল। শোকজের জবাব দেওয়ার পর তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার মো. গাউস ১৮ এপ্রিল আরেকটি চিঠি দেন। তাতে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রকাশ না করার বিষয়ে গাজী তারেক সালমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আগৈলঝাড়া, বরিশালকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দাখিলের অনুরোধ করা হলে তিনি লিখিত জবাব দাখিল করেছেন। তার দাখিল করা জবাব সন্তোষজনক নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়।’ এই চিঠির অনুলিপি তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকেও দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগকারী ওই একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো বিভাগীয় কমিশনার আমাকে জানাননি।’ বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. গাউস এপ্রিলেই অতিরিক্ত সচিব হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদায়নের জন্য বদলি হয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি টেলিফোনে বলেন, ‘কোনও লিখিত অভিযোগ নয়, পার্টির লোকজন আমার কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহারে নিয়ম-কানুন মানা হয়নি। তাই আমি ডিসিকে বলেছিলাম ইউএনওকে শোকজ করতে।’ ইউএনও সালমানের জবাব কেন তার কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহারের কিছু আইন-কানুন আছে। কার্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি ফার্স্ট পেজে না দিয়ে ব্যাক পেজে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে তার জবাব সন্তোষজন মনে হয়নি আমার কাছে এবং আমি তা সংস্থাপন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করা হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়নি। ব্যাক পেজে ছাপা হয়েছে, এটাই আমার কাছে আইনের লঙ্ঘন বলে মনে হয়েছে।’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘এ জন্য তার (সালমান) বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ ইউএনও গাজী তারেক সালমন জানান, ‘আমাকে শোকজের পর জবাব দেই। এরপর আমাকে আর কোনও চিঠি দেওয়া হয়নি। ২৪ মে আমাকে আগৈলঝাড়া থেকে বদলি করা হয়। আমি জুন মাসে বরগুনা সদরে যোগ দেই।’

আগৈলঝাড়া উপজেলার ইউএনও থাকাকালে গাজী তারেক সালমান শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে স্বাধীনতা দিবসে কার্ড ছাপান। এই কার্ড নিয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তাকে আগৈলঝাড়া থেকে বরগুনা সদরে বদলি করা হয় বলে সূত্রের দাবি। তারপরও তিনি রেহাই পাননি। বরগুনা সদর উপজেলায় বদলি হয়ে যাওয়ার পর ৭ জুন তার বিরুদ্ধে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ ও মানহানির মামলা করেন বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। ওই মামলায় ১৯ জুলাই প্রথমে তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও পরে একই দিনে তাকে জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। আইনজীবী ওবায়েদ উল্লাহ সাজু দাবি করেন, ‘মামলা করে আমি যদি অপরাধ করে থাকি, তাহলে জেলা প্রশাসনও এ দায় এড়াতে পারে না। জেলা প্রশাসক তাকে শোকজ করেছেন আগে। আর আমি মামলা করেছি তার অনেক পরে।’