মোস্তাফিজুর রহমান : আশাশুনিতে পারিবারিক অশান্তি, পিতা-মাতার উপর অভিমান ও সামাজিক নানা অসঙ্গতির কারনে দিন দিন অপমৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আর এ আতœহত্যার মিছিলে উঠতি বয়সীদের সংখ্যাই বেশি। গত ৭ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই-২০১৭ সময়ে (১৩ দিন) এ মিছিলে যোগ দিয়েছে ৪ জন। যাদের ২জন মাধ্যমিকের ছাত্রী, ১জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ও ১জন নব-বধু। জানা গেছে, এ অপমৃত্যুগুলো হয়েছে গলায় ফাঁস দিয়ে। গত ৭ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় কুঁন্দুড়িয়া গ্রামের রিক্সা চালক শওকত গাজীর কন্যা ও কুঁন্দুড়িয়া পি এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাতিমা খাতুন গলায় ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করে। পিতা-মাতা জানায়, তাদের মেয়ে ফাতিমা ছোট বেলা থেকে মানষিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। অভাবের সংসারে মেয়ের স্কুলের খরজসহ অন্যান্য খরজের টাকা ঠিক মত দিতে না পারায় মায়ের সাথে অভিমান চলছিল। সর্বশেষ ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তার মা প্রতিবেসির নিকট থেকে টাকা ধার নিতে গিয়েছিল। টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরে দেখে তার আদরের মেয়েকে তার পড়ার ঘরের আড়ায় বাধা রশ্মি থেকে নামাচ্ছে। রশ্মি থেকে নামানোর পরেও ফাতিমা জীবিত ছিল কিন্তু ডাঃ আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। থানার এস আই শাহ মোঃ আব্দুল আজিজ সঙ্গিয় ফোর্স ঘটনা স্থান পরিদর্শন কালে প্রতিবেদককে জানান, কারো কোন অভিযোগ না থাকায় এবং উপর মহল থেকে দাফনের অনুমতি নিয়ে আসায় ময়না তদন্ত ছাড়াই তার দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়। ৯ জুলাই রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় উপজেলার বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ওই গ্রামের নজরুল ইসলামের কন্যা সুপ্তিয়ারা পিয়াকে সাংসারিক বিষয় নিয়ে মা বকনি দিলে মায়ের উপর অভিমান করে গলায় উড়না পেচিয়ে ঘরের আড়ার সাথে ওড়না বেঁধে আতœহত্যা করে। এ ঘটনায় এসআই আব্দুর রাজ্জাক এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি অভিযোগের ভিত্তিতে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরিকালে মৃত পিয়ার থুতুলের নিচে ডান পার্শে বৃদ্ধাঙ্গুলের ন্যায় রক্তজমাট কালশিরা যুক্ত একটি মারাত্তক আকারের দাগ দেখতে পায়। তাছাড়া গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যার তেমন কোন চিহ্ন দেখতে না পেরে সন্দেহ হয়্। বাধ্য হয়ে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ময়না তদন্তের জন্য শতবার বাধ সাধার সত্ত্বেও তিনি সকল বাঁধা উপেক্ষা করে নিহাতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা মর্গে প্রেরন করেন। তিনি আরও জানান, ভিসারা রিপোর্ট শেষে আত্মহত্যা নাকি অন্য কোন সমস্যা সে বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আশাশুনি সদর ইউনিয়নে ভাত দিতে দেরি হওয়ায় মায়ের উপর অভিমান করে রানা নামে প্রথম শ্রেণির এক ছাত্র আতœহত্যা করে। সবদালপুর গ্রামের মোঃ মুনছুর সরদারের পুুত্র সবদালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির ছাত্র মোঃ রানা ১০জুলাই সোমবার সকালে নিজ বাড়ীর ঘরের আড়ার সাথে ও গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। এক্ষেত্রেও কারো কোন অভিযোগ না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশের দাফন সম্পন্ন হয়। সর্বশেষ বিয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই ১৯জুলাই বুধবার ভোররাতে ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে ফাঁস আটকে আলো খাতুন নামে নববধুর আত্মহত্যা। যার বিয়ে হয়েছিল মাত্র দেড় মাস পূর্বে। আলো খাতুনের স্বামী আশাশুনি সদরের শীতলপুর গ্রামের শহিদুলের বক্তব্য প্রতিদিনের ন্যায় ঘটনার দিন সে ভোর রাতে ব্যবসার মাছ ক্রয় করতে মৎস্য ঘেরে যায়। তার স্ত্রী ঘরের দরজা আটকে শুয়ে পড়ে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে সে বাড়ির সবার অজান্তে ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস আটকে আত্মহত্যা করে। মৃত্যু নববধু আলোর মা রহিমা খাতুন, বাবা আবুল কালাম ও ভাই সাব্বির জানান, তাদের বোনকে মেরে ফেলানোর পর টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থান পরিদর্শন ও সুরোতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরন করে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলার বভিন্ন এলাকার সচেতন মহলের সাথে কথা বললে তারা নির্দিষ্ট কাহকে উদ্দেশ্য করে কথা না বললেও তাদের মতে এগুলো সব আতœহত্যা নাও হতে পারে। প্রত্যেকটি বিষয়ের সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত। আশাশুনি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিদুল ইসলাম শাহীন এ প্রতিবেদককে জানান, আতœহত্যার প্রবণতা বাড়ছে এটা সত্য। আমরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এটা নিয়ে জনমত গঠনের প্রক্রিয়ার পাশাপাশি এ অপমৃত্যু রুখতে প্রোচারনা চালাচ্ছি। কোথাও ১০-২০জন এক হলে আমি এবং আমার অফিসাররা বাল্যবিবাহ ও সম্প্রতি আতœহত্যার বিষয় নিয়ে কথা বলে মানুসকে সচেতন করার চেষ্টা করি। দেখা গেছে, সম্প্রতি যারা আতœহত্যার মিছিলে যোগ দিচ্ছেন তারা অধিকাংশই স্কুলের ছাত্র বা ছাত্রী তাই আমরা স্কুল কলেজে ‘আতœহত্যা কোন সমাধান নয়’ এটার উপর সেমিনার করার কথা ভাবছি।