সাতক্ষীরা

বদলি ঠেকাতে জেলা পরিষদের মাহাবুবের করা আপিল খারিজ

By Daily Satkhira

July 25, 2017

এম বেলাল হোসাইন : সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের ষাটলিপিকার থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতির পর বদলির খারিজ হওয়া রুলনিশির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দায়েরকৃত এস এম মাহাবুবর রহমানের আপিল খারিজ করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর দু’টোয় চেম্বার জজ বিপুল বাগমার এ আপিল খারিজ করে দেন। ফলে বগুড়া জেলা পরিষদে যোগদান করা ছাড়া মাহাবুবর রহমানের আপাতত অন্য কোন উপায় থাকছে না। এদিকে এ আদেশ কার্যকর হলে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদে মাহাবুবর রহমানের ২৭ বছরের রামরাজত্বের অবসান ঘটবে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ষাটলিপিকার থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতির পর স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ২০০৫ সালের ১৪ জুন এস,এম, মাহবুবুর রহমানকে দ্বিতীয়বার জামালপুর জেলা পরিষদে বদলী করেন। তিনি জামালপুর জেলা পরিষদে যোগদানের জন্য আবেদন করলেও যোগদানপত্র গৃহীত হয়নি। অপরদিকে গত ২০০৫ সালের ১৯ আগষ্ট সাতক্ষীরা জেলার চার জন সংসদ সদস্য এস,এম মাহবুবের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির অভিযোগে এক ডিও লেটার পাঠিয়ে তার বিরুদ্ধে শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের ৬৪টি গৃহ বন্দোবস্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে অর্ধ কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণ, জেলার বিভিন্ন খেয়াঘাট লক্ষ লক্ষ টাকা উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে পূর্ববর্তী ডাকের চেয়ে কম ডাকে ইজারা দেওয়াসহ বিভিন্ন দূর্ণীতির কথা উল্লেখ করেন। একইভাবে অনেকগুলো অভিযোগকারির অভিযোগের ভিত্তিতে তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জসিমউদ্দিন তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে মাহবুবর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির প্রমানসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। তার বিরুদ্ধে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠনের মাধ্যমে তদন্ত করার জন্য দাবি জানানো হলেও এক অদৃশ্য কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ২০০৫ সালের ১৪ জুন বদলী আদেশ চ্যালেঞ্জ ও একই বছরের ১৯ আগষ্ট চার সাংসদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত ডিও লেটারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাহবুববর রহমান হাইকোর্টে -৬৯১৭/২০০৫ নং রীট পিটিশন দায়ের করেন। সেখানে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী ভুইয়া মোঃ আতাউর রহমানের ২০০৩ সালের ১৭ জুনের একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে সাতক্ষীরা জেলা ন্যাপ এর সাধারণ সম্পাদক কাজী সাঈদুর রহমানের অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর আদালত শুনানীন্তে উক্ত আদেশের উপর রুলনিশি জারী করেন এবং বদলী আদেশ স্থগিত করেন। স্থগিতাদেশ থাকা অবস্থায় পরবর্তীতে তিনি সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ থেকে তাহার বেতন ভাতা এবং রীট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চাকুরীতে যাহাতে স্থিতিবস্থা বজায় থাকে সে জন্য তিনি ২০০৫ সালের ৮ অক্টোবর একটি আবেদনপত্র দাখিল করেন এবং তা’ মঞ্জুর হয়। তাকে সাতক্ষীরা জেলাা পরিষদে রাখার জন্য গত বছরের ১২ মে ও ৩০ মে প্যাডে চিঠি লিখে সব ধরনের সহায়তা করেন যথাক্রমে তৎকালিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনসুর আহম্মেদ ও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোঃ মনিরুজ্জামান। ১৩ জুলাই উভয়পক্ষের শুনানী শেষে এ সংক্রান্ত রীট পিটিশনটি নিষ্পত্তি করে মাহাবুবর রহমানের বিরুদ্ধে যে কোন ধরণের দূর্ণীতির তদন্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় করতে পারবে বলে আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়। প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের ষাটলিপিকার থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান এসএম মাহাবুবর রহমান। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ২০০১ সালের ২৬ জুন এস,এম, মাহবুবর রহমানকে পঞ্চগড় জেলা পরিষদে বদলী করেন। উক্ত বদলী আদেশকে চ্যালেজ্ঞ করে তিনি হাইকোর্টে ৩৪৪৬/২০০১ নং রীট পিটিশন দায়ের করেন। ৪ আগষ্ট শুনানী শেষে আদালত উক্ত বদলী আদেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে পরদিন বিবাদীগনের বিরুদ্ধে রুললনিশি জারী করেন। ২০০৫ সালের ২৪ মে বাদি মাহাবুবর রহমান রিট মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। জামালপুরে বদলী সংক্রান্ত রীট পিটিশনটির কার্যক্রম চলাকালিন তাকে ২০১৬ সালের ১৪ জুন বগুড়ায় বদলী করা হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে ৭৩৩৩/২০১৬ নং রীট পিটিশন দায়ের করেন এসএম মাহাবুবর রহমান। গত ১২ জুলাই বিচারক কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ উভয়পক্ষের শুনানী শেষে মাহাবুবর রহমানের দায়েরকৃত রীট পিটিশনের রুলনিশি খারিজ করে দিয়ে সরকারি কর্মচারি হিসেবে বদলী হতে হবে বলে আদেশ দেন। এদিকে খারিজ হওয়া রুলনিশির (৭৩৩৩/১৬) এর বিরুদ্ধে এসএম মাহাবুবর রহমান গত ১৬ জুলাই চেম্বার জজে আপিল(সিভিল মিসলেনিয়াস পিটিশন নংÑ১২২৩/১৭) করেন। চেম্বার জজ বিপুল বাগমার শুনানী শেষে খারিজ করে দেন। পিটিশনকারির পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড.জয়নুল আবেদীন।। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. রিয়াজউদ্দিন খান রেজা ও অ্যাড. সত্যরঞ্জন ম-ল। জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনজীবী অ্যাড. রিয়াহউদ্দিন খারন রেজা বলেন, সোমবারের আদেশ সাতক্ষীরা জেলা পরিষদে পৌঁছানোর পর মাহাবুবর রহমানকে বগুড়ায় যোগদান করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকবে না। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে সোমবার বিকেলে তার ০১৭১১-৩৫২৭২০ নং মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।