ডেস্ক রিপোর্ট : ‘মুক্তামণি এখন কেমন আছে? ওকে কি দেশে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব? আপনারা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালান, বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওকে সুস্থ করে তুলতে আরও কী ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন তা জানুন। প্রয়োজনে সিঙ্গাপুর বা অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে শিশুটিকে সুস্থ করে তুলতেও আমার আপত্তি নেই। আর সেই আবুল বাজানদার এখন কেমন আছে?’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে চাচ্ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন শিশু মুক্তামণি ও ট্রিম্যান খ্যাত আবুল বাজানদারের বর্তমান শারীরিক অবস্থা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে গেলে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ডা. জুলফিকার লেনিনের কাছে ঠিক এভাবেই আন্তরিক মনোভাব নিয়ে তাদের সম্পর্কে জানতে চান শেখ হাসিনা। ‘কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত অবধি যিনি রাষ্ট্রীয় নানা কাজে সদাব্যস্ত। কিন্তু গরিব, দুঃখী ও নিঃস্ব এবং হৃতদরিদ্র মানুষগুলোর কথা ভুলেন না। ওদের কথা ভাবেন, পরম মমতা নিয়ে পাশে দাঁড়ান তিনি।’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডা. সামন্ত লাল সেন এভাবেই গল্পচ্ছলে প্রধানমন্ত্রীর এসব গুণাবলির কথা বলছিলেন। আর জানাচ্ছিলেন সাক্ষাৎকালে কী কী কথা হয় শেখ হাসিনার সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছিলেন। তার পক্ষে ডা. জুলফিকার লেনিন বার্ন ইউনিটে এসে মুক্তামণিকে দেখে যান ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন। গত কয়েকদিন কী চিকিৎসা দেয়া হলো, তার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন? এ সম্পর্কে জানাতে সর্বশেষ চিকিৎসার ফলোআপ রিপোর্ট নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনি ও ডা. জুলফিকার লেনিন যান। ডা. সেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিকভাবে সময় নিয়ে মুক্তামণির রোগটি সম্পর্কে শোনেন। তিনি দেশীয় চিকিৎসকদের ওপর আস্থা রেখে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। পাশাপাশি সিঙ্গাপুর কিংবা উন্নত কোনো দেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসার কাগজপত্র পাঠিয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। ডা. সেন জানান, মুক্তামণিকে সুস্থ করে তুলতে সিঙ্গাপুর বা উন্নত দেশে পাঠানোর প্রয়োজন হলে পাঠাবেন বলে আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। মুক্তামণির প্রসঙ্গ শেষ হতে না হতেই তিনি আবুল বাজানদারের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ খবর জানতে চান। প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে জেনে তিনি খুশী হন। মুক্তামণিও নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে উঠবে এমনটা প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফিরে বিকেলেই ডা. সেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে যোগাযোগ করে মুক্তামণির চিকিৎসা সংক্রান্ত হালনাগাদ কাগজপত্র স্ক্যান করে সেখানে পাঠিয়ে দেন। সেখানকার চিকিৎসকরা এমআরআইসহ আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেই ফলাফলগুলো পাঠানোর পরামর্শ আপাতত দিয়েছেন। মুক্তামণির সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. সেন জানান, মুক্তামণির রক্তে প্লাটিলেট কমে গেছে। সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের দেহে এক লাখ ৫০ হাজার বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ প্লাটিলেট থাকে। কিন্তু তার শরীরে মাত্র ২২ থেকে ২৪ হাজার প্লাটিলেট রয়েছে। রক্ত থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে তার শরীরে দিয়ে প্লাটিলেট বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলা জনপ্রিয়তম অনলাইন নিউজপোর্টাল ডেইলি সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে মুক্তামণির অসুস্থতার খবর প্রকাশিত হয়। এরপর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের উদ্যোগে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওইদিনই রাতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয় এবং প্রধানমন্ত্রী মুক্তামনির চিকিৎসার সমস্ত দায়ভার গ্রহণ করেন।
এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ :