ডেস্ক রিপোর্ট : ইউএনও তারিক সালমনকে নাজেহালের ঘটনায় বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আলী হোসাইনকে বদলির পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের তদন্ত চেয়েছে সরকার। এ বিষয়ে পদক্ষেপ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়, “এহেন পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের বরিশাল সিএমএম আদালত ও বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ও সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে বিচারক আলী হোসেনকে অন্যত্র বদলি করা আবশ্যক। অধিকন্তু তার বর্তমান কর্মস্থলে বদলিযোগ্য মেয়াদ পূর্তি হয়েছে। তাছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উদ্ভূত ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা নিরূপনের জন্য তদন্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।” তারিকের ঘটনা নিয়ে বরিশাল ও বরগুনার জেলা প্রশাসককে সরিয়ে দেওয়ার পর বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিচার বিভাগের কাছে নির্বাহী বিভাগের সুপারিশ গেল। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজুর করা এক মানহানির মামলায় বরগুনা সদরের ইউএনও গাজী তারিককে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় আলোচনা চলছে এই বিচারক নিয়ে। বরিশাল সার্কিট হাউসে তার ৯৩ হাজার ৯৫০ টাকা বকেয়া থাকার ঘটনাও সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে বিচারক আলী হোসাইনের বিরুদ্ধে গ্রীন লাইন পরিবহনে যাতায়াতের ভাড়া পরিশোধ না করার অভিযোগ ওঠার কথা বলা হয়েছে। এজন্য বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচার কার্যক্রম নিয়ে জনমনে নানাবিধ ‘বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে’ বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়। আলী হোসাইনের জায়গায় বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষক (অতিরিক্ত জেলা জজ) শেখ আশফাকুর রহমানকে বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম হিসেবে বদলির প্রস্তাব করা হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে। মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. শাহাবুদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠি মঙ্গলবার তাদের হাতে পৌঁছায় বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ। তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের জেনারেল অ্যাডমিন্টিস্ট্রেশন কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা আইন মন্ত্রণালয়কে জানাবে।” তারিক সালমন বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে ছাপিয়েছিলেন’ অভিযোগ করে গত ৭ জুন মামলা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। ওই মামলায় সমন জারির প্রেক্ষাপটে ১৯ জুলাই তারিক সালমন আদালতে হাজির হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন মুখ্য মহানগর হাকিম আলী হোসাইন। একই বিচারক দুই ঘণ্টা পর জামিন মঞ্জুর করেন বলে ইউএনও তারিকের ভাষ্য। তাকে আদালত প্রাঙ্গনে পুলিশের ধরে নেওয়ার ছবি প্রকাশ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিস্মিত হয়েছেন জানিয়ে তার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম গণমাধ্যমকে বলেন, সেই ছবিতে বিকৃত করার মতো কিছু তারা দেখেননি বরং এটি একটি ‘সুন্দর কাজ’। এই প্রেক্ষাপটে ২১ জুলাই ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। তারিক সালমনকে নাজেহালের দিন বরিশালের আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের ছয় সদস্যকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। রোববার মামলা প্রত্যাহার করেন সাজু। পরদিন বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান এবং বরগুনার জেলা প্রশাসক বশিরুল আলমকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত নেওয়া হয়। তাদের জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন দুজনকে।