হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় চার শিশু হত্যার দায়ে মামলার তিন আসামিকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ এবং আরো দুজনকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তিনজন খালাস পেয়েছেন।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মকবুল আহসান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কিশোর কুমার কর।
আইনজীবী আরো জানান, ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন হাবিবুর রহমান আরজু, রুবেল মিয়া ও উস্তার মিয়া। সাত বছরের সশ্রম দণ্ড দেওয়া হয়েছে জুয়েল মিয়া ও শোয়েব আহমেদ বশিরকে। আর খালাস পেয়েছেন আবদুল আলী বাগাল, বিল্লাল মিয়া ও বাবুল মিয়া।
তাঁদের মধ্যে উস্তার মিয়া, বাবুল মিয়া ও বিল্লাল পলাতক। বাকিরা রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তা নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারাগারে থাকা পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের চার শিশু নিখোঁজ হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে গ্রামের অদূরে বালিমাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই শিশুরা হলো—সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মো. ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার দুই চাচাতো ভাই আবদুল আজিজের ছেলে একই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়ার ছেলে একই বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র মনির মিয়া (৭) এবং তাদের প্রতিবেশী আবদুল কাদিরের ছেলে সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র ইসমাঈল হোসেন (১০)।
এ ঘটনায় বাহুবল থানায় নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মনির মিয়ার বাবা আবদাল মিয়া। শুরুতে এ মামলা দেখভাল পুলিশ করলেও পরে তা তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। একই বছরের ২৯ এপ্রিল ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মুক্তাদির নয়জনের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার আসামিরা ছিলেন আবদুল আলী বাগাল, হাবিবুর রহমান আরজু, রুবেল মিয়া, জুয়েল মিয়া, শোয়েব আহমেদ বশির, বিল্লাল মিয়া, উস্তার মিয়া ও বাবুল মিয়া। এ ছাড়া এ মামলার আসামি বাচ্চু মিয়া মামলা চলাকালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান।
অভিযোগপত্র গ্রহণের পর একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বরে মামলাটির বিচার শুরু হয়। হবিগঞ্জ আদালতে মামলার ৫৭ সাক্ষীর মধ্যে ৪৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ মামলাটি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এখানে আরো সাতজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
আসামিদের মধ্যে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দুই পঞ্চায়েত আবদাল মিয়া তালুকদার ও আবদুল আলী বাগালের মধ্যে পারিবারিক বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে মামলার তদন্ত ও আসামিদের দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে।