আন্তর্জাতিক

নওয়াজ-বেনজির: দুর্নীতির অন্ধকারে পাকিস্তানের রাজনীতি

By Daily Satkhira

July 28, 2017

তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ। তবে দুর্নীতির অভিযোগে এবারই প্রথমবারের মতো তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি, বরং ঠিক এমনই দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের আরেকটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা ও দুইবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী  প্রয়াত নেতা বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধেও।

এমনকি তার নিজের এবং স্বামী আসিফ আলী জারদারির বিরুদ্ধে এই অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া থেকে শুরু করে জেল-জরিমানার আদেশও হয়েছে তার বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আত্মঘাতীর বোমার আঘাতে শেষ হয় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার।

নওয়াজ শরীফ: ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন নওয়াজ শরীফ। তবে দেশ পরিচালনার তিন বছর না যেতেই দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন নওয়াজ।

এরপর ১৯৯৭ সালে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে জয়লাভ করেন নওয়াজ। তবে তখনও ক্ষমতায় আসার মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। তবে এবারও আগেরবারের মতো একই প্রেক্ষাপটে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তখন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নওয়াজকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। এরপর দীর্ঘ ১৪ বছর তাকে বিদেশের মাটিতে নির্বাসনে থাকতে হয়।

নির্বাসন থেকে ২০০৭ সালে দেশে ফিরে পরের বছর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিলেও ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বেনজির ভুট্টোর নেতৃত্বে সরকার গঠন করে পিপিপি।

২০১৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ। তবে এবারও শেষ রক্ষা হয়নি তার। পানামা পেপারস ফাঁসের জেরে দায়ের হওয়া মামলায় শেষ পর্যন্ত সুপ্রীম কোর্টের রায়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করার পর মেয়াদ পূর্ণের আগে আবারও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

পানামা পেপারসে ফাঁস হওয়া তথ্যে জানা যায় ক্ষমতা অপব্যবহার করে নওয়াজ ও তার পরিবারের সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। অভিযোগের তদন্ত করতে আদালতের নির্দেশে যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) গঠন করা হয়। জেআইটির কাছে নওয়াজ তার নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের বিপুল পরিমাণ সম্পদের উৎস জানাতে ব্যর্থ হন। জেআইটি’র এ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে শুক্রবার নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দেয় আদালত।

বেনজির ভুট্টো: ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক কর্তৃক বেনজিরের পিতা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসি কার্যকর করার পর দেশের রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত জিয়াউল সরকার তাকে বহুবার অন্তরীণ করে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ১৯৮৪ সালে লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি।

১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে বেনজীর ভুট্টো জনমত গঠন করেন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তবে ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট দুর্নীতি এবং সংঘাত নিরসনে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইসহাক খান বেনজির ভুট্টোকে বরখাস্ত করেন।

১৯৯৩ সালে আবারও নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীত্ব লাভ করেন তিনি। ১৯৯৬ সালের ৬ নভেম্বর তাকে পুনরায় বরখাস্ত করা হয়। তাকে বরখাস্ত করে ওই সময় পার্লামেন্ট ভেঙে দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফারুক লেঘারি। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যান তিনি।

এর দু’বছর পর ১৯৯৯ সালে সুইজারল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে বেনজির ও তার স্বামী আসিফ আলী জারদারিকে পাঁচ বছরের জেল এবং ৮৬ লাখ ডলার জরিমানা করে পাকিস্তানের একটি আদালত। তবে উচ্চ আদালত পরবর্তীতে এই রায়কে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে রায় দেয়।

এরপর আট বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন কাটিয়ে ২০০৭ এর অক্টোবরে বেনজির পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করেন। ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডির এক নির্বাচনী সমাবেশ শেষে সভাস্থল ত্যাগ করার পর এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন বেনজির ভুট্টো।