পানামাভিত্তিক আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার এক কোটিরও বেশি আলোচিত নথি ২০১৫ সালে ‘পানামা পেপারস’ নামে ফাঁস হয়েছিল। ওই ঘটনার জেরে পদত্যাগ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ।
পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের পরিবারের দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে। ফাঁস হওয়া নথিতে নওয়াজ শরীফ সহ তার চার ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনজন মরিয়ম, হাসান ও হোসেনের নামও উঠে আসে। নওয়াজের সন্তানরা মোসাক ফনসেকার মাধ্যমে পরিচালিত বিভিন্ন অফশোর কম্পানির মালিকানার অংশীদার।
ওইসব নথিতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ফুটবলার মেসি থেকে শুরু করে বলিউড সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চনসহ বিশ্বের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের নাম উঠে আসে। ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কীভাবে, কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন, তা বেরিয়ে আসে এসব তথ্যে।
ফাঁস হওয়া ওইসব নথির সূত্রে অভিযোগ ওঠে, নওয়াজ শরীফ সন্তানদের মাধ্যমে বিদেশে প্রচুর অর্থ পাচার করছেন, গড়ে তুলছেন সম্পদের বিশাল পাহাড়। পাকিস্তানে নওয়াজ বিরোধী পক্ষ নওয়াজকে সম্পদের হিসাব দিতে আহ্বান জানান।
নওয়াজ পরিবারের এই কেলেঙ্কারি নিয়ে ফুঁসে ওঠে রাজনৈতিক দলগুলো। বিরোধী দল তেহরিক ই ইনসাফ ও পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলের আবেদনের ভিত্তিতে দুর্নীতির অভিযোগটি আমলে নেয় আদালত।
বিরোধীদের করা আবেদনে অভিযোগ করা হয়, লন্ডনের সম্পদের লভ্যাংশের মালিক ছিলেন মরিয়ম। ওই সম্পদে তার দুই ভাই হাসান ও হুসেইন শরিফের যৌথ মালিকানা রয়েছে। আরও অভিযোগ করা হয়, মরিয়ম বাবার ওপর নির্ভরশীল থাকায় প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের তার সম্পদের বিবরণে মেয়ের প্রপার্টি ও ফ্ল্যাটের বিষয়টি উল্লেখ করা উচিত ছিল।
যদিও নওয়াজ শরিফের ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-এন) দাবি, পাকিস্তান ও উপসাগরীয় অঞ্চলে বৈধপথে পারিবারিক ব্যবসা থেকেই এই সম্পদ অর্জিত হয়েছে।
আবার কোনো ধরনের দুর্নীতির কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন নওয়াজ শরীফ। নিজ পরিবারের ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা উল্লেখ করে নওয়াজ বলেন, ‘পাকিস্তান প্রতিষ্ঠারও ২৫ বছর আগে আমার বাবা ব্যবসা শুরু করেছেন। স্বাধীনতাকালে এবং এর পরে তা সাফল্য অর্জন করেছে।
ঢাকায়ও নওয়াজ শরীফের বাবার শিল্প কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় সেটা আর হয়নি বলেও একটি ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন সদ্য সাবেক এই পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী।
এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে আদালত।তদন্ত শুরু করে নওয়াজ এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে শুক্রবার পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির মামলায় প্রধানমন্ত্রী পদে নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণা করেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ের পরপরই তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।