খেলা

‘সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার’ গ্যারি সোবার্স

By Daily Satkhira

July 29, 2017

ক্রিকেটের বরপুত্র। বাইশ গজে তুলেছেন ঝড়, সবুজ মাঠে তুলেছেন সুর, গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। বলা হচ্ছে স্যার গারফিল্ড সেন্ট আব্রাম সোবার্স বা গ্যারি সোবার্সের কথা। যিনি ক্রিকেট আকাশের শত তারার মধ্যে একটি সূর্য, ‘সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার’।

১৯৫৪ সালে কিংস্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের পর জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৯৩টি টেস্ট। ৫৭.৭৮ গড়ে করেছেন ৮,০৩২ রান। ২৬টি শতক আর ৫০টি অর্ধশতকে সাজানো ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৩৬৫! বল হাতে ৩৪.০৩ গড়ে নিয়েছেন ২৩৫ উইকেট। বোলিংয়ে সোবার্সের বিশেষত্ব ছিল অন্য জায়গায়। স্বল্প রান আপে তুলতে পারতেন গতির ঝড়, লেগ স্পিন ঘূর্ণিতে ভড়কে দিতেন প্রতিপক্ষ ব্যাটম্যানকে। কখনো কখনো একই ওভারে দুই রকমের বলই করতে দেখা যেত তাঁকে। ক্যারিয়ারে একটি মাত্র ওয়ানডে খেলেছেন সোবার্স। কোনো রান করতে না পারলেও একটি উইকেট নিয়েছিলেন সে ম্যাচে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৩৮ ম্যাচে ৫৪.৮৭ গড়ে করেছেন ২৮৩১৪ রান। ৮৬টি সেঞ্চুরি এবং ১২১টি হাফ সেঞ্চুরি। ২৭.৭৪ গড়ে নিয়েছেন ১০৪৩টি উইকেট। ৯৫টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে করেছেন ২৭২১ রান, নিয়েছেন ১০৯টি উইকেট।

রেকর্ডের বরপুত্র গ্যারি সোবার্স। টেস্টে তাঁর অপরাজিত ৩৬৫ রানের রেকর্ডটা ৩৬ বছর ধরে টিকে ছিল। ১৯৩৪ সালে ইংলিশ ব্যাটম্যান স্যার লেন হাটনের ৩৬৪ রানের রেকর্ড ভেঙে এ কীর্তি গড়েন সোবার্স। সেটা ১৯৫৮ সালের কথা। এরপর ৩৬ বছর পর, ১৯৯৪ সালে রেকর্ডটি ভেঙে দেন সোবার্সেরই স্বদেশি কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা। ৩৭৫ রান করে লারা টপকে যান পূর্বসূরিকে। ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৪০০ রান করে লারা এখনো এই পর্বতের চূড়ায় রয়েছেন।

সবচেয়ে কম বয়সে ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ানও তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে সোবার্স যখন ৩৬৫ রান করেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ২১ বছর ২১৩ দিন। এর আগে ১৯৩০ সালে অসি কিংবদন্তি স্যার ডন ব্রাডম্যান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩৪ রান করেছিলেন ২১ বছর ৩১৮ দিন বয়সে।

টেস্টে আট হাজার রান করা প্রথম ব্যাটসম্যান সোবার্স। ১৯৭৪ সালে ১৫৭ ইনিংসে দাঁড় করানো আট হাজার রানের মাইলফলক দীর্ঘ ২৮ বছর ছিল দ্রুততম আট হাজার রানের রেকর্ড। যা ২০০২ সালে ভেঙে দেন শচীন টেন্ডুলকার (১৫৪ ইনিংস)। বর্তমানে এ রেকর্ডটি কুমার সাঙ্গাকারার (১৫২ ইনিংস) দখলে। তবে একটা জায়গায় সোবার্সকে পেছনে ফেলতে পারেননি কেউই। আট হাজারের অধিক রান করা ব্যাটম্যানদের মধ্যে তাঁর ৫৭.৭৮ গড়ই সবার ওপরে। শুধু ব্যাট-বলেই নয়, মাঠের যে কোনো পজিশনে অসাধারণ ফিল্ডারও ছিলেন সোবার্স। তাই অনেকেই তাঁকে বলতেন, পরিপূর্ণ প্যাকেজ, অনেকেই এক বাক্যে মেনে নেন ‘তিনিই সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার’।

১৯৬৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কের দায়িত্ব পান সোবার্স। অধিনায়ক হিসেবে সোবার্সের পারফরম্যান্সও চোখে পড়ার মতো। অধিনায়ক হিসেবে তিন হাজারের অধিক রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেবল ব্রাডম্যান (১০১.৫১) এবং মাহেলা জয়াবর্ধনে (৫৯.১১) আছেন সোবার্সের (৫৮.৮০) ওপরে। অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ১০৮০৬০টি বল করেছেন সোবার্স।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ওভারে ছয়টি ছক্কা হাঁকানো প্রথম ব্যাটসম্যানও তিনি। নটিংহ্যাম্পশায়ারের অধিনায়ক হিসেবে গ্ল্যামারগানের বিপক্ষে এ কীর্তি গড়েন সোবার্স। সেদিনের দুর্ভাগা বোলারটি ছিলেন ওয়েলসের ম্যালকম নাশ। ১৯৮৪-৮৫ সালে ভারতের রবি শাস্ত্রী সোবার্সের এ রেকর্ডে ভাগ বসান। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে এ কীর্তি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার হার্শেল গিবস এবং টি-টোয়েন্টিতে ভারতের যুবরাজ সিংয়ের।

১৯৭৪ সালে ক্রিকেটকে বিদায় বলেন এ কিংবদন্তি, শেষ হয় ক্রিকেটে সোবার্সীয় যুগ। ২০ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অসংখ্য পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন সোবার্স। একাধিকবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৬৪ সালে উইজডেনের ‘ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন। ক্রিকেটে বিশেষ অবদানের জন্য ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৯৮ সালে বার্বাডোসের সংসদের জাতীয় বীরের মর্যাদা লাভ করেন। ২০০০ সালে ‘উইজডেন ক্রিকেট অব দ্য সেঞ্চুরি’র সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন ছিলেন সোবার্স। ১০০ জন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯০টি ভোট পান তিনি। তাঁর সঙ্গে বাকি চারজন হলেন ব্রাডম্যান, জ্যাক হবস, শেন ওয়ার্ন ও ভিভ রিচার্ডস।

১৯৮০ সালে বৈবাহিকসূত্রে বার্বাডিয়ান-অস্ট্রেলীয় দ্বৈত নাগরিক সোবার্স ১৯৬৭ সালে ‘বোনাভেঞ্চার অ্যান্ড দ্য ফ্ল্যাশিং ব্লেড’ শীর্ষক উপন্যাস এবং একই বছরে জেএস বার্কারের সঙ্গে যৌথভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট ইতিহাস নামের বই প্রকাশ করেন। ১৯৩৬ সালে বার্বাডোজে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তির গতকাল ছিল ৮১তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন ‘নাইট’।