শ্যামনগর

নব দম্পতিসহ ৬ জনের মৃত্যু; করিমগাজির বাড়িতে শোকের মাতম

By Daily Satkhira

July 30, 2017

আসাদুজ্জামান : মেহেদির রং না শুকাতেই চিরদিনের মতো হারিয়ে গেলেন স্বামী নাজমুল ও তার স্ত্রী আরিফা। ওমান থেকে দীর্ঘদিন পর স্বদেশে আসা খালা খায়রুন বিবিও আর কোনোদিন হাসিমুখে কথা বলবেন না। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়নের কাঠামারি গ্রামের বাড়িতে আজ রোববার সকালে তাদের মরদেহ পৌছাতেই এভাবেই বিলাপ করছিলেন বাড়ির লোকজন। বাড়ি আর গ্রাম জুড়ে যখন শোকের মাতম, তখন তাদের জন্য বাড়ির পাশেই চলছিল কবর খোড়ার কাজ। বাড়ির কর্তা ৭০ বছরের বৃদ্ধ করিম গাজির প্রত্যাশা ছিল মেয়ে খায়রুন বাড়ি আসছে, আর সত্ত্বরই নাতি নাজমুন আর নাত বৌ আরিফাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে। মারা গেছেন করিম গাজি তার মেয়ে খায়রুন এবং নাতি নাজমুন আর নাত বৌ আরিফা। মাত্র ২০ দিন আগে বিয়ে হয়েছিল নাজমুনের সাথে শ্যামনগরের হরিনগর গ্রামের আরিফা খাতুনের। বড় সখ করে ঢাকা বিমান বন্দরে গিয়েছিল তারা। ওমান ফেরত খালা খায়রুনকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু ঘাতক পরিবহন বাস তাদের সব স্বপ্নকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে একটি মাইক্রো বাসে সাতক্ষীরা আসার পথে ফরিদপুরের মধুখালিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তাদের। একই সাথে প্রাণ হারান মাইক্রো চালক শ্যামনগরের ভুরুলিয়া গ্রামের আনিসুর রহমান (২৫) ও তার হেলপার ভাগনে জাহিদ হোসেন (১৮)। তাদেরকে তাদের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মা খায়রুনকে আনতে যাওয়া দুই ছেলে খায়রুল ইসলাম ও সাইফুদ্দিন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এখনও ফরিদপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা শংকামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। স্বামী করিম গাজির মরদেহের পাশে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন স্ত্রী রুপিয়া বেগম। স্বামী, মেয়ে নাতি ও নাত বৌকে হারিয়ে তিনি এখন পাগলপ্রায়। কোনো সান্তনাই তার শোক দূর করতে পারছে না। ছেলে কৃষিজীবী লুৎফর বিলাপ করে বলছিলেন ‘কেনো ওরা এক সাথে ঢাকায় গেলো। এখন আমরা কাদের নিয়ে বেঁচে থাকবো’। কৈখালি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম জানান সকাল ৯ টায় তাদের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। নামাজে জানাযা শেষে করিম গাজি, তার মেয়ে খায়রুন ও নাজমুলকে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নাত বৌ আরিফাকে দাফন করা হয়েছে তার বাপের বাড়ি শ্যামনগরের হরিনগর গ্রামে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল আজিজ বলেন জানাযায় গ্রামের বহু লোক শরিক হন।