আসাদুজ্জামান : অপকিল্পিত বেঁড়িবাধ দিয়ে মৎস্য ঘের নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের জনজীবন এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে জেলার সাতটি উপজেলার ৩ হাজার ৪’শ ২৮ হেক্টর মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। যা ঘেরের পরিমাণ ৩ হাজার ১’শ ৫০ টি। এতে ৩৬২ মেট্রিকটন মাছ ও ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তবে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আশাশুনি উপজেলার মৎস্য ঘেরগুলোয়। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে জেলার সাতটি উপজেলার ১২’শ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে, আউশ ও আমন ধানের বীজতলা, পাটক্ষেত ও বিভিন্ন প্রকার সবজির ক্ষেত। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সাতক্ষীরা শহররে বদ্দীপুর কলোনী, পুরতান সাতক্ষীরা সরদার পাড়া, ডেইয়ের বিল, কামালনগর, মধুমোল্যারডাঙ্গী, মেহেদেীবাগ, মাছখোলা, বিনেরপোতা ও লাবসা এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে রাস্তাঘাট, বাড়ি ঘর ও ফসলি জমি। অপরদিকে, গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে তালা উপজেলার শত শত হেক্টর মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। রোপা আমন, ধান, পাট, সিম, সহ বিভিন্ন শাক-সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে থাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখনো শবজি ক্ষেত ও ফসলি জমি পানিতে থৈ থৈ করছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তালা উপজেলা সদর ইউনিয়ন, খেসরা, ইসলামকাটি, খলিলনগর, খলিশখালী ও জালালপুর ইউনিয়নের ১০/১২ টি গ্রাম। এসব অঞ্চলের বসতবাড়িতে এখনও হাটু, কোথাও কোমর পানি। আর জলাবদ্ধতার কারণে দেখা দিয়েছে সেখানকার মানুষের মাঝে পানিবাহিত চুলকানী রোগ।
সংশি¬ষ্টরা বলছেন, পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের ও জেলার কয়েকটি নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে এ জেলার নিম্নঞ্চল প্লাাবিত হচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলা গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলী নুর খান বাবুলসহ একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, অপকিল্পিত বেড়িবাধ দিয়ে মৎস্য ঘের তৈরি করে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করায় প্রত্যেক বছরই বর্ষা মৌসুমে জেলা শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানের নি¤œাঞ্চলে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তারা জানান, শহরের কামাননগর, পলাশপোল ও মাছখোলা এলাকায় কয়েক জন প্রভাবশালী ঘের মালিক পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে চিংড়ি ঘের করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘের মালিকরা পানি নিষ্কাশনের কোন পথ রাখেননি। যার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই এসব এলাকার বাড়ি,ঘর ও রাস্তায় পানি উঠছে। তাই মাছের ঘের কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা অতীব জরুর। আর তা না হলে এলাকার হাজার হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে পানিবন্দী হয়ে পড়বে। তারা আরো বলেন, সাতক্ষীরা শহরের বড় একটি অংশের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র উপায় পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের খড়িবিলা খাল। অথচ সে খালে নেটপাটা দিয়ে স্থানীয় কয়েজন ব্যক্তি ঘের ব্যবসা শুরুকরায় কয়েক হাজার মানুষ আজ পানিবন্দী। ভেলায় করে রাস্তা পারাপার করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা পৌর মেয়র ও জেলা প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম জানান, গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষনে জেলার সাতটি উপজেলার ৩ হাজার ৪’শ ২৮ হেক্টর মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশাশাশুনি উপজেলায়।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নাণ জানান, গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে জেলার সাতটি উপজেলার ১২’শ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, আবহাওয়া বর্তমানে ভাল থাকায় নিমজ্জিত অঞ্চলের পানি ইতিমধ্যে কমতে শুরু করেছে।