ডেস্ক রিপোর্ট : বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষিরার শিশু মুক্তা-মনির অপারেশন আজ শনিবার। জানা গেছে, মুক্তামনির হাতে অস্ত্রোপচার দেশেই করা হবে। তার শরীরে রক্তের শূণ্যতা রয়েছে। অপারেশনের পূর্ব থেকে কাল অপারেশনের সময় পর্যন্ত প্রায় চার ব্যাগ রক্তের সাদা অংশ (প্লাটিলেট) প্রয়োজন। এ বিষয়ে শুক্রবার মুক্তার মা আসমা খাতুন বলেন, ’আগামীকাল মুক্তার হাতের অপারেশন করা হবে। আর এজন্যে আজ রাত ২ টা থেকে মুক্তাকে কোনো রকম খাবার খেতে নিষেধ করেছে। ডা. বলেছেন মুক্তার অপারেশনের সময় প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।’ অপারেশনের জন্য মুক্তা মানসিকভাবে প্রস্তুত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তার প্র্রচুর সাহস। ও কিছুতেই ভয় পায়না। অপারেশনের আগে নিজেকে ঠিক রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ইসলামিক গান, দোয়া কালাম পড়ে। ইনফেকশনের কারণে যদি মুক্তার ডান হাত কেটে ফেলা হতে পারে, তাহলে আপনি কি তা চান? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডাক্তাররা যা ভালো মনে করবে তাই করুক, যেকোনো মূল্যে আমি আমার মেয়েকে সুস্থ দেখতে চাই’। আমরা অনেক জায়গায় আমার মেয়েকে নিয়ে ঘুরেছি তার মধ্যে থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসায় আমরা খুবই খুশি।সবাই দোয়া করবেন চিকিৎসা শেষে সুস্থ মেয়েকে নিয়ে যেন বাড়ি যেতে পারি। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড সার্জারি বিভাগের কনফারেন্স রুমে মুক্তামনির চিকিৎসার করণীয় বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, মুক্তামণির বায়োফসি করার প্রয়োজন ছিল। তবে তার রক্তের প্লাটিলেট বারবার কমে যাওয়ার কারণে বায়োপসি নেয়ার প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছিল। এ কথা জেনে প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার ব্যাপারে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। গত ২৭ জুলাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সাথে বোর্ড মিটিং করা হয়। পরবর্তীতে ই-মেলের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল জানায়, মুক্তামণির এ রোগটি ভালো হওয়ার মতো নয়। অপারেশন করার মতোও নয়। তারা রোগটির পরীক্ষা-নীরিক্ষার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে কিন্তু মুক্তার রোগের চিকিৎসা করতে পারবে না। তিনি বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহতি করলে তিনি দেশেই অস্ত্রোপচার করতে বলেন। পরবর্তীতে আমরা অস্ত্রোপচারের জন্য ১৩ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করি।বোর্ডের এক সভায় ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সব প্রকারের সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা শনিবার মুক্তার বায়োপসি করার সিদ্ধান্ত নেই। মুক্তার জন্য সবাই দোয়া করবেন। মুক্তার হাতটি কাটা হচ্ছে কি না সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে বোর্ড প্রধান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বলেন, এই রোগ শুধু চামড়ায় সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। মাংসে ছড়িয়ে যেতে পারে। সব কিছু বিবেচনা করেই চিকিৎসা করা হবে। তবে আমরা হাতটি রেখে দেয়ার চেষ্টা করব। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসার অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। মুক্তাকে যখন প্রথম ভর্তি করা হয় তখন ওর হাতের দুর্গন্ধের কারণে সেখানে কেউ থাকতে পারত না। গন্ধও কমেছে। এই চিকিৎসা একটি অপারেশনে শেষ হবে না। ছয় থেকে সাতটি অপারেশন লাগবে। তার শরীর স্বাভাবিক রেখেই কিছু মাংস ও চামড়া প্রতিস্থাপন করা হবে। মুক্তামণির ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জানা গেছে, সিঙ্গাপুর থেকে ই-মেইল আসার পর মুক্তার বাবা-মায়ের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা। মুক্তার চিকিৎসা চলাকালীন বিভিন্ন ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন তারা। তবে একবারের জন্যও সাহস হারায়নি মুক্তার পরিবার। চিকিৎসকদের শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন মুক্তার মা আসমা খাতুন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি মুক্তামনির এই বিরল রোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরই তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১১ জুলাই মুক্তামনিকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে ৬ তলার কেবিন ব্লকে ৬০৮ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন।