আসাদুজ্জামান : সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগ, তাঁতীলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীদের বাধার মুখে সিভিল সার্জন অফিসের বক্সে দরপত্র জমা দিতে পারলেন না ঠিকাদাররা। রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের বক্সে এ দরপত্র ফেলার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়। জানা যায়, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের অফিস সহকারির যোগসাজসে তিনটির পরিবর্তে একটি স্থানে দরপত্র ফেলানোর বক্স রেখে একটি মহলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি ঠিকাদাররা দরপত্র ফেলার জন্য সেখানে গেলে তারা বাধার সম্মুখীন হলে সেই ছবি তুলতে গেলে ডেইলি সাতক্ষীরা ও আজকের সাতক্ষীরা’র বার্তা সম্পাদক এম বেলাল হোসাইন এর মোবাইল কেড়ে নিয়ে সে ছবি মুছে দেওয়া হয়। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয় থেকে ইডিসিএল বহির্ভুত ঔষধপত্র, সার্জিকাল যন্ত্রপাতি, লিলেন সামগ্রী, গজ-ব্যা-েজ-তুলা ইত্যাদি, পরীক্ষা নিরীক্ষা ও কেমিক্যাল সামগ্রী, এমএসআর আসবাবপত্র ও কিচেন সামগ্রী, এমএসআর যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে চলতি বছরের ৬ জুলাই প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকার প্রকল্লন ব্যয় হিসেবে দরপত্র আহবান করা হয়। প্রতিসেট দরপত্র কেনার জন্য এক হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। দরপত্র আহবানের দিন থেকে গত ৩ আগষ্ট পর্যন্ত দরপত্র সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করা হয়। নিদ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ২৩ টি দরপত্র বিক্রি হয়। রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিভিল সার্জন অফিসে ঝোলানো একটি বক্সে দরপত্র ফেলার জন্য নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেওয়া হয়। শান্তিপূর্ণভাবে দরপত্র ফেলার সুবিধার্থে সিভিল সার্জন অফিসের দু’পাশের দু’টি ফটকে ও অফিসের মধ্যে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার পর সাতটি গ্রুপের দরপত্রের বিপরীতে ছয়টি দরপত্র জমা পড়ে। এসআর আসবাবপত্র ও কিচেন সামগ্রীর বিপরীতে কোন দরপত্র জমা পড়েনি। সরেজমিনে, রোববার সকাল ১০ টায় সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান ফটকে (মেইন রোড সংলগ্ন) যেয়ে দেখা গেছে ফটকটি আটকানো। ফটকের বাম পাশে বাঁশ বাঁধা হয়েছে। তিনজন পুলিশ সদস্য ও একজন অফিস কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। ফটকের বাইরে জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি মীর শাহীন, পৌর তাতী লীগের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন, যুবলীগ কর্মী নূর আলম মুকুলের নেতৃত্বে ২০/২৫জন যুবক ঘোরাফেরা করছেন। আবার কয়েকজন বসে আছেন পার্শ্ববর্তী দোকানে। বিপরীত দিকের ফটকে একজন অফিস কর্মী ও একজন পুলিশ কর্মকর্তা অবস্থান করছেন। ফটকের বাইরে পৌর যুবলীগের আহবায়ক মনোয়র হোসেন অনু, সাধারণ সম্পাদক তুহিনুর রহমান, যুবলীগ কর্মী মফিজুল ইসলাম, শাহীনুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভির হোসেন সুজন, সাধারণ সম্পাদক এহসান হাবিব অয়ন, সাতক্ষীরা সদর ছাত্রলীগ নেতা আহসান হাবিব, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মিঠুন ব্যানার্জী, ছাত্রলীগ কর্মী বারিক, আরিফুল হক, এনামুর রহমান নিপুন, রমজান আলী রাতুল, বিরাজসহ ৩৫/৪০ জন অবস্থান করছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা পরিষদের সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী অ্যাড. শাহানাজ পারভিন মিলি, পৌর সৈনিক লীগের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম মেনন, তকদির এন্টারপ্রাইজের এসকেন্দার আলী, মেসার্স এসআর এন্টারপ্রাইজের শাহীন হোসেন প্রথমে প্রধান ফটকে ও পরে ভিতরের দ্বিতীয় ফটক দিয়ে দরপত্র জমা দিতে গেলে তারা ফটকের বাইরে অবস্থানকারী ওইসব নেতা কর্মীদের দারা বাধাগ্রস্ত হন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে বাক বিত-া হয়। বাক বিত-ার ছবি তোলার পর নূর ইসলাম মুকুলসহ কয়েকজন দৈনিক আজকের সাতক্ষীরার বার্তা সম্পাদক বেলাল হোসেনকে কটাক্ষ করেন। পরে তার কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ধারণকৃত ছবি মুছে ফেলে ফেরৎ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে অ্যাড. শাহানাজ পারভিন মিলি সাংবাদিকদের জানান, তিনি খুলনার সাইফুল ইসলাম ট্রেড লিমিটেড এর পক্ষে দরপত্র ফেলতে যাওয়ার সময় সিভিল সার্জন অফিসের দু’টি ফটকে পৌর যুবলীগের আহবায়ক মনোয়র হোসেন অনু, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এহসান হাবিব অয়ন, জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি মীর শাহীন ও যুবলীগ কর্মী নূর হোসেন মুকুলসহ কয়েকজনের বাধার মুখে সিভিল সার্জন অফিসে ঢুকতে পারেননি। একইভাবে একই ব্যক্তিদের বাধার মুখে খুলনার তাকবির এন্টারপ্রাইজের পক্ষে দরপত্র জমা দিতে পারেননি বলে জানান পৌর সৈনিকলীগের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম মেনন। বাধা পেয়ে দরপাত্র জমা না দিয়ে ফিরে যাওয়ার কথা বলেন ঢাকার শাহীন এন্টারপ্রাইজের শাহীন ও মেসার্স এসআর এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সাহেব আলী। বিষয়টি পুলিশ ও সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসককে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি বলে তারা অভিযোগ করেন। জমা দিতে ব্যর্থ হওয়া দরপত্র ক্রেতারা বলেন, সরকারি কাজের এক কোটি টাকার বেশি কাজ হলে জমা দেওয়ার জন্য তিনটি স্থানে তিনটি বক্স দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। আর বিদেশীদের কাজ হলে একটি বক্সই যথেষ্ট। অথচ সিভিল সার্জন ডাঃ তহিদুর রহমান ও ওই অফিসের প্রধান করণিক আনোয়ার হোসেন একটি মহলকে বিশেষ সুবিধথা দেওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে যোগসাজস করে একটি বক্সে দরপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা তাতী লীগের সভাপতি মীর শাহীন জানান, তিনি নূর ইসলাম মুকুলের পক্ষে একটি দরপত্র জমা দিতে এসেছিলেন। এজন্য তিনি বা তার দলের লোকজন সিভিল সার্জনের অফিসের ফটকে কিছু সময় অবস্থান করলেও কোন দরপত্র জমা দাতাকে বাধা দেননি। যুবলীগ কর্মী নূর ইসলাম মুকুল বলেন, তিনি ফটকে অবস্থান করলেও কাউকে বাধা দেননি। কোন সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ছবি মুখে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এহাসান হাবিব অয়নের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, অন্যদের সঙ্গে তিনিও সিভিল সার্জন অফিস এলাকায় ছিলেন। তবে তিনি বা ছাত্রলীগের কোন নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে দরপত্র জমা দিতে আসা ঠিকাদারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। সাতক্ষীরা পৌরলীগের আহবায়ক মনোয়র হোসেন অনু সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বা তার দলের কোন ছেলের বিরুদ্ধে দরপত্র জমা দিতে আসা ঠিকাদারদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। তারা সেখানে অন্যদের মতো দেখতে গিয়ে ছিলেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরেরর সাতক্ষীরা শাখার সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জাকারিয়া হোসেন জানান, এক কোটি টাকার বেশি সরকারি কাজের দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য তিনটি বক্স টাঙাােনর নিয়ম রয়েছে। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের অফিস সহকারি আনোয়ার হোসেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দরপত্র কেনা ও জমা দেওয়ার ব্যাপারে কোন মহলের সঙ্গে যোগসাজসের অভিযোগ ঠিক নয়। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ তওহীদুর রহমান জানান, পাবলিক প্রকিউরমেন রুল অনুযাীয় তিনি দরপত্র ফেলাসহ সব কাজ করেছেন। কোন ঠিকাদার দরপত্র জমা দিতে এসে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন এমনটি তার জানা নেই। তবে কোন ঠিকাদার দরপত্র জমা দিতে বাধা পেলে বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ও সচীব মহোদয়কে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন জানান, দরপত্র জমা দিতে যেয়ে ঠিকাদাররা সিভিল সার্জন অফিসের ফটকে বাধা পেয়ে ফিরে এসেছেন এমন অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তাৎক্ষনিক সিভিল সার্জন মহোদয়কে অবহিত করা হয়।