কেএম রেজাউল করিম : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দর্শন নন্দিত আর্কষণীয় করে তুলতে ইছামতির তীরে অবস্থিত ম্যানগ্রোভ মিনি সুন্দরবনকে পর্যটনমুখী করে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। জেলার সদর হতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরে ইছামতি নদীর তীরে শিবনগর মৌজায় প্রায় ৫০ একর জমি জুড়ে রয়েছে এ বনটি। দেবহাটা “রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র” উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্র। উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় টাউনশ্রীপুর এলাকায় ভারতের টাকী পৌরসভার বিপরীতে ইছামতি নদীর তীরে এই পর্যটন কেন্দ্রটি তৈরী করা হয়। এই বনটিতে বহু প্রজাতির ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রয়েছে। সুন্দরবনের আদলে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ বৃক্ষের চারা এনে রোপন করে ব্যাপক বনের সৃষ্টি করা হয়েছে। এই বনের বুক চিরে ১০একর জমিতে রয়েছে “অনামিকা লেক”। এই লেকে রয়েছে শান বাধানো পাকা ঘাট। বিনোদন প্রিয়াসীদের জন্য রয়েছে বসারস্থান। ইছামতি নদীর তীরে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি এ ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি উপজেলায় মানুষকে গর্বিত করে। শীবনগর মৌজায় ভাঙ্গন রোধে বনসৃষ্টি করা উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। উদ্যোগ গ্রহনের সাথে সাথে ম্যানগ্রোভ বনে যাওয়ার রাস্তা পাকা, টাউনশ্রীপুর থেকে নদী পথে বন পর্যন্ত যাওয়ার সুব্যবস্থা, সমগ্র বনটির উপভোগের জন্য বনের উপর দিয়ে ক্রেনের ব্যবস্থা, কৃত্রিম জীবজন্তুর ব্যবস্থা, বনের লেকে বোটের ব্যবস্থাসহ নানা মূখি প্রস্তাবনা ও বাস্তাবায়নে সিন্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে। ইতোমধ্যে বনটির সৈন্দর্য বৃদ্ধি করতে ২রুম বিশিষ্ট ভবন, একটি টিকিট কাউন্টার, প্রবেশদার গেটসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে, সাতক্ষীরা জেলার ইছামতি সীমান্তের ইছামতির তীরে গড়ে ওঠা দৃষ্টিনন্দিত মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য ম্যানগ্রোভ মিনি সুন্দরবনটির পরপর পরিধি বাড়ছে। ২০০৯ সালে দেবহাটার সুশিলগাতী এলাকার নদীর বেড়ি বাধ ভেঙ্গে প্লাবিত হলে বাধ রক্ষায় ২০১০ সালে উপজেলার প্রশাসনের উদ্যোগে বাধ রক্ষায় ও প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষার জন্য ১০একরের মত জায়গা জুড়ে তৈরী এই ম্যানগ্রোভ বন। বেশ কয়েক বছর যেতে যেতে বনের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর রক্ষা পায় আশে পাশের এলাকাবাসীরা। সেই সাথে স্থানটির চাহিদা বাড়াতে জেলা, উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পারিবারিক ভাবে বনভোজনের আয়োজন করা করা হয়। বর্তমান স্থানটিতে কোন প্রকার ফি দিতে না হওয়ায় স্্েরাতাবহ ইছামতির তীরে নিরিবিলি সময় কাটাতে আসেন বিনোদন প্রেমীরা। ইছামতির তীরে সৃষ্ট বনটির চাহিদা বাড়াতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং সার্বিক সহযোগীতায় সমগ্র বনটির উপভোগের জন্য বনের উপর দিয়ে ক্রেনে স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকালে উক্ত কাজের অগ্রগতি প্ররিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী হাফিজ-আল-আসাদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন দেবহাটা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী, উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার বাবলুর রহমান। পরির্দন কালে নির্বাহী অফিসার বলেন, ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনটি সৈন্দয্য বাড়াতে এবং জনপ্রিয় করে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ক্রেনের কাজ শুরু হয়েছে। তবে পরিপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে কতটুকু কাজ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি দেবহাটার উপজেলা তথা বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ। তাই পরিপূর্ণ করে তুলতে যা যা করা দরকার সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সব করা হবে। ছুটির দিনে ঘুরতে আসা কয়েক জনের সাথে কথা বললে তারা জানায়, স্থানটি অনেক নিরিবিলি, মনোমুগ্ধকর হওয়ায় মাঝে মধ্যে আসি। সরকারি ভাবে যদি উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে ম্যানগ্রোভ বনের মর্যদা আরো বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে সরকার রাজস্ব পাবে। তাছাড়া দেবহাটার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। এদিকে, ইছামতিতে ঠেলা জালের কারনে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই বন সংলগ্ন এলাকাতে যদি মৎস্য অহরণ বন্ধ করা যায় তাহলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের জাত বিলুপ্ত থেকে রক্ষা পাবে। তাই বনের পাশাপাশি মাছের অভয় আশ্রম গড়ে তুলতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতনমহল। সেই সাথে স্থানীয়দের দাবি সকল প্রকার চক্রান্ত বন্ধ করে একটি বিনোদন স্পট নির্মাণ করতে পারলে এই উপজেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটকের উপস্থিতিতে ভরে উঠবে এবং সরকারের রাজস্ব তহবিল বৃদ্ধি পাবে।