অপ্রতিম রহমান : বিরল রোগে আক্রান্ত ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের শিশু মুক্তামনির হাতে অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে আজ। সকাল আটটায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হবে। আর এজন্য সব দিক দিয়ে প্রস্তুত রয়েছেন চিকিৎসকরা। যদিও এতে অনেক ঝুঁকি ও রক্তপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে অস্ত্রোপচারের আগে শিশুটি যেন মানসিকভাবে শক্ত এবং খুশি থাকে, সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী তার জন্য হাসপাতালে চকলেট ও টাকা পাঠিয়েছেন। মুক্তামনির জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় কিক্রেট দলের অধিনায়ক(টেস্ট) মুশফিকুর রহিম। অন্যদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় মুক্তামনিকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু। এসময় তার সাথে ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ওসমান গনি, মাস্টার দা’ সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিনসহ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বে থাকা সাতক্ষীরা জেলার শিক্ষার্থীরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, “শনিবার মুক্তামনির অস্ত্রোপচার করা হবে। সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে এ অস্ত্রোপচার শুরু হবে। এজন্য আমাদের মেডিকেল বোর্ড সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে এতে অনেক ঝুঁকি ও রক্তপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।” তিনি আরো বলেন, আমরা আগে থেকেই মুক্তামনির জন্য রক্ত সংগ্রহ করে রেখেছি। আমরা সব ধরনের সতর্কতার সঙ্গে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকবো। অপারেশন ছাড়া তার আর কোনও চিকিৎসা নাই। এত বড় হেমানজিওমাতে অপারেশন ছাড়া আর কিছু করার নাই। যদি এমন অবস্থা হয় যে তার জীবন বাঁচাতে হাত কেটে ফেলতে হবে আমরা তাই করবো। এক্ষেত্রে তার পরিবারেরও সমর্থন রয়েছে। এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মুক্তামনির জন্য চকলেট পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বার্ন ইউনিটে গিয়ে মুক্তামনির হাতে এগুলো তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ডা. জুলফিকার লেনিন। ডা. জুলফিকার লেনিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী খবর পাঠালেন। তিনি বললেন, শনিবার মুক্তামনির অপারেশন। তিনি আমাকে মুক্তামনির জন্য চকলেট নিয়ে যেতে বলেন। অপারেশনের আগে শিশুটি যেন মানসিকভাবে শক্ত থাকে, ওর মন যেন খুশি থাকে, সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী আমাকে ওর কাছে উপহার দিয়ে পাঠান।” ডা. লেনিন আরো বলেন, শনিবার অপারেশন, সে কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রী ওর খুশি থাকার কথা চিন্তা করেছেন, এটা তো বিশাল ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী কিছু টাকাও দিয়েছেন, যা মুক্তামনির বাবার কাছে দিয়েছেন ডা. লেনিন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী সবসময় মুক্তামনির চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছেন। তার জন্য দোয়া করছেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন। এরই মধ্যে মুক্তার চিকিৎসার জন্য একটি বোর্ড গঠনসহ সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার কামারবাইশালের মুদি দোকানদার ইব্রাহিম হোসেনের দুই জমজ মেয়ে হীরামনি ও মুক্তামনি। জন্মের দেড় বছর পর থেকে মুক্তামনির সমস্যা শুরু। প্রথমে হাতে টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে তা ফুলে কোলবালিশের মতো হয়ে যায়। বিছানাবন্দি হয়ে পড়ে মুক্তামনি। সাতক্ষীরা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা চিকিৎসা চলে। তবে ভালো হয়নি বা ভালো হবে, সে কথাও কেউ কখনো বলেননি। গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে খবর প্রকাশ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনায় আসে মুক্তামনির খবর। গত ১১ জুলাই মুক্তাকে ভর্তি করানো হয় বার্ন ইউনিটে। তারপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। ওই দিনই ঢাকা মেডিকেলে মুক্তামনির চিকিৎসার জন্য ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।