আব্দুল জলিল : ‘পুলিশকে আগে দ্ইুবার টাকা দিয়েছি। আমরা আর দিতে পারবো না। তাতে যদি আমার স্বামীকে মেরেও ফেলেন, তবে তার লাশটি আমার বাড়ি পৌঁছে দেবেন’।’ শনিবার রাতে পুলিশকে একথা বলেছেন সাতক্ষীরার সীমান্ত গ্রাম তলুইগাছার মাওলা বকসের স্ত্রী শাহানারা খাতুন। তিনি বলেন পুলিশ বাড়ি ঘর তল্লাশি করে কোনো কিছুই পায়নি। তবু তাকে ধরে নিয়ে গেছে। শহানারা খাতুন অভিযোগ করে বলেন আমার স্বামী দীর্ঘদিন আগে বিভিন্ন মালামাল পারাপার করতো। কয়েক বছর আগে ছেড়েও দিয়েছে সে কাজ। গত বছর সাতক্ষীরা থানার এসআই আবুল কালাম তাকে ধরতে আসেন। তিনি বলেন ‘তোর ঘরে ১০ কেজি সোনা আছে। তুই সোনা পাচারকারী। গ্রেফতার হবি, না টাকা দিবি।’ শাহানারা বলেন শেষ পর্যন্ত রফা হয় দেড়লাখ টাকায়। জমি বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করে পুলিশকে দিয়েছিলাম। আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন এ ঘটনার মাস দুয়েক পর ফের আমার স্বামীকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেবার দিতে হয়েছিল আশি হাজার টাকা। রোববার রাতে আমার বাড়িতে ফের পুলিশ আসলে আমি বলি ‘আমার স্বামী আর টাকা দিতে পারবে না। তার কোনো অপরাধ নেই’। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রোববার রাতে একদল পুলিশ মাওলা বকসের বাড়িতে হানা দেয়। রাতে ঘরের দরজা না খুলে মাওলা বকস নিজের লুঙ্গি গলায় পেচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তারপরও পুলিশের কবল থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য ঘরের টিন উল্টে অপর একটি ঘরের চালে উলঙ্গ অবস্থায় উঠে পড়েন তিনি। এ সময় পুলিশ তাকে জানায় ‘তুমি নেমে এসো। তোমার ঘর তল্লাশি করে কিছু না পেলে চলে যাবো’। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন মাওলা বকস পুলিশের প্রতি আস্থা রেখে নেমে আসেন। এ সময় তার ঘর তল্লাশি করা হয়। কিন্তু ঘরে কিছুই পাওয়া যায়নি। পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান বলেন ‘মাওলার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মাওলা বকস পুলিশের সাথে প্রতারণার লক্ষ্যে নিজ ঘরে আত্মহত্যার ভান করে। পরে ঘরের টিনের চাল উল্টে মাদকদ্রব্য সরিয়ে রেখে উলঙ্গ অবস্থায় চালের ওপর অবস্থান নেয়। আমরা পরে তাকে গ্রেফতার করি।’ এসআই নাজমুলের সাথে থাকা পুলিশের এএসআই সায়মুল ইসলাম জানান, ‘মাওলা বকস খুব খারাপ মানুষ। সে একজন মাদক পাচারকারী। তার স্ত্রী এবং মেয়েও এই ব্যবসা করে বলে অভিযোগ রয়েছে’। এ কারণেই তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মাওলা বকসের স্ত্রী শাহানারা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন ‘আমার এক ছেলে বজলু মালয়েশিয়ায় থাকে। আরেক ছেলে মজনু চোখে দেখে না। এক মেয়ে স্কুলে পড়ে। সেও অসুস্থ। তাদের তো ভবিষ্যত আছে। আমি টাকা জোগাড় করে স্বামীকে বাড়ি আনলেই তো পুলিশ কাল আবার তাকে ধরে নিয়ে যাবে। তাই কোনো যোগাযোগ করিনি। থাকুক পুলিশের কাছে’।