নিজস্ব প্রতিবেদক : টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের আওতাধীন মসজিদ, মন্দির ও দুঃস্থ ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দকৃত সোলার প্যানেল নিয়মবহির্ভূতভাবে বিত্তশালী ও চাকুরিজীবীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। অভিযোগ, প্রত্যেকের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা নিয়ে এক কাজ করেছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য মফিজুল ইসলাম। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পে রাস্তা সংস্কার, মন্দির ও মসজিদ সংস্কারের বরাদ্দ চাল ও টাকার অর্ধেকাংশ সরাসরি প্রদান ও বাকি অর্ধেক বাবদ এক একটি প্রকল্পে একটি করে সোলার প্যানেল দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য প্রাপক প্রতিষ্ঠান বা দুঃস্থদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসে জমা দেবেন। সে অনুযায়ী সরকারিভাবে বরাত পাওয়া ইটকল সোলার কোম্পানি তালিকা অনুযায়ি সোলার প্যানেল নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বা বাড়িতে লাগিয়ে দেবেন। ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা তা দেখে ছাড়পত্র দিলেই ওই কোম্পানি বিল পাবেন। ঝাউডাঙা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের যুগরাজপুর গ্রামের ধোনা সানার ছেলে মোসলেম আলী ও আতিয়ার রহমান বাবু জানান, গত জুন মাসে টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের আওতাধীন সোলার প্যানেল পাওয়ার জন্য ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলাম ২৫ জনের তালিকা তৈরি করেন। ওই তালিকা তৈরিতে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তিনি সরকারি চাকুরিজীবী ও বাড়িতে পল্লী বিদ্যুতের মিটার আছে, বিত্তশালী যাদের বাড়িতে পল্লী বিদ্যুতের মিটার আছে এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত করেন। এ জন্য তিনি প্রতি সোলার প্যানেল গ্রহীতার কাছ থেকে আড়াই হাজার করে টাকা নিয়েছেন। এমনকি একই পরিবারের পাঁচ ভাই এ সোলার প্যানেল পেয়েছেন যাদের প্রত্যেকের বাড়িতে পৃথক পৃথক মিটার আছে। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক মিটার থাকার পরও নিজের ভাই ও চাচাত ভাই এমন পাঁচজনকে গত তিন চার দিনের মধ্যে সোলার প্যানেল লাগানোর ব্যবস্থা করেছেন। সরেজমিনে শনিবার সকালে যোগরাজপুর গ্রামে যেয়ে দেখা গেছে পল্লী বিদ্যুতের মিটার থাকা আব্দুল খালেকের ছেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত মেহেদীর বাড়িতে, জুডিশিয়াল কোর্টের পেশকারের পিওন রোজেন ইসলামের বাড়িতে, যোগরাজপুর পশ্চিমপাড়ার ইমান আলী মাস্টারের ছেলে শরিফুল্লাহ মোড়ল, আহসানউল্লাহ মোড়ল, শফিকুল্লাহ, আতাউল্লাহ ও ইমদাদ মোড়লের বাড়ি, বাবর আলীর ছেলে জালাল ও খোকনের বাড়িতে বৈদ্যুতিক মিটার থাকার পর ও সোলার প্যানেল লাগানো হয়েছে। একইভাবে বাবর আলীর ছেলে বিত্তশালী জালালউদ্দিন ও খোকনের বাড়িতে সোলার প্যানেল লাগানো হয়েছে। আব্দুল বারির ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও হাফিজুর রহমানের বাড়িতে লাগানো হয়েছে সোলার প্যানেল। উত্তর দেবনগর গ্রামের অরুন ম-ল, অমল ম-ল, ছাতিয়ানতলা গ্রামের হরিপদ দাসসহ কয়েকজন জানান, তাদের মত অসহায় দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা এ ওয়ার্ডে কম নয়। দুর্গম এলাকা হওয়ায় ইচ্ছা করলেই তারা টাকা খরচ করে বৈদ্যুতিক মিটার লাগাতে পারবেন না। তারা সোলার প্যানেল দাবি করলেও টাকা দিতে না পারায় তাদেরকে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া মফিজ মেম্বর স্বজন পোষন করে সোলার প্যানেল লাগিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঝাইডাঙা ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলাম সোলার প্যানেল লাগানোর তালিকা তৈরিতে অনিয়ম হয়নি এমন কথা অস্বীকার করেই বলেন টাকা নেওয়ার ও ঢালাওভাবে অনিয়মের অভিযোগ ঠিক নয়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জালালউদ্দিন জানান, এ ধরণের অনিয়মের কথা তার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।