আসাদুজ্জামান : আর মাত্র কয়েকদিন বাদেই পবিত্র ঈদুল আজহা। আর এই ঈদুল আজহার আগেই ভারত থেকে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে গরু আসা একেবারেই কমে যাওয়ায় দেশি গরুর কদর বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। সরগরম হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার গরুর হাটগুলো। একই সাথে দেশি গরুর উৎপাদন এবং চাহিদাও বেড়েছে অনেক গুণ। এবার কোরবানিতে জেলার চাহিদা মিটিয়ে ১০ হাজারের ওপরে গরু, ছাগল ও ভেড়া উদ্বৃত্ত থাকবে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও পাঠানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগ। সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকারি পশু চিকিৎকদের সহযোগিতায় এ বছর সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় ৫৩ হাজার ২৯৯ টি গরু ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ হাজার হাজার ১১৪টি গরু, ১৫ হাজার ৬৫১ টি ছাগল, ৫ হাজার ৫৩৪টি ভেড়া কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোরবানীর পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিকভাবে শতাধিক গরু মোটাতাজাকরণ খামারও গড়ে উঠেছে। কোরবানীতে দেশি জাতের ও শংকর জাতের গরু চাহিদা বেশি থাকায় খামারীরা এ ধরনের গরু স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মোটা তাজাকরণ করেছেন বছর জুড়ে। জেলার বড় পশুর হাট পাটকেলঘাটা বাজার, দেবহাটার পারুলিয়া ও সাতক্ষীরা সদরের আবাদের হাট। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে নতুন পুরাতন পশুহাটগুলোতে কোরবানীর পশু উঠতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ি ও বেপারিরা বাড়ি বাড়ি যেয়ে পশু অনুযায়ি দরদাম করে কিনতে শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ নিজেরা বাড়িতে গিয়ে পছন্দের গরু-ছাগল কিনে রাখছেন। শহরের মিয়া সাহেবেরডাঙি গ্রামের আব্দুল গফ্ফার জানান, তিনি ৯ গরু পালন করছেন সাত মাস ধরে। ভারত থেকে গরু না আসলে তিনি ভাল দামে গরু গুলি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। সদর উপজেলার দহাকুলা গ্রামের চৌধুরী বাসিরুল ইসলাম জানান, তিনি চার বছর ধরে গরু পালন করছেন। বর্তমানে তার ফার্মে ৮ টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে কোরবানীর উপযুক্ত আছে ৫টি গরু। কোরবানিতে দেশি গরুর চাহিদা বেশি থাকায় তিনি ভাল লাভ করতে পারবেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, পশু পালনে একদিকে যেমন দারিদ্র বিমোচনে বেকারত্ব ঘুচাচ্ছে, অন্যদিকে আমিষের চাহিদা পূরণে অগ্রনী ভুমিকা রেখেছে। সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, সাতক্ষীরার ভাতশালা, হাড়দ্দাহ, বৈকারী, কুশখালী, তলুইগাছা, কাকডাঙ্গা, ঘোনা, গাজীপুর, ভোমরা, মাদরা, হিজলদী, চান্দুড়িয়াসহ সীমান্তের ১৭ টি পয়েন্ট দিয়ে এক সময় প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার ভারতীয় সিন্ধি, ফ্রিজিয়ান, জার্সি, হরিয়ানা, নেপালী, সম্বলপুরিসহ বিভিন্ন জাতের গরু বাংলাদেশে আসতো। এসব গরু নিয়ে যাওয়া হত রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্নি স্থানে। সীমান্তবর্তী ভাতশালা গ্রামের বজলুর রহমান জানান, ভারত কঠোর হওয়ায় সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে গরু আসছেনা বললেই চলে। মাঝে মধ্যে দুই পাচটা গরু আসছে। যা কোরবানীর বাজারে কোনো প্রভাব ফেলবেনা। এমনকি খাটালগুলি বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা হয়েছে বলে জানান তিনি। সাতক্ষীরা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, সাতক্ষীরার চারটি করিডোরের আওতায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে গরু এসেছে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টি, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ৯৯৪ টি, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে মাত্র ৭৬ হাজার ৬৭০ টি, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ১ লাখ ১৪হাজার ৩৯৮ টি গরু এসেছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জুলাই মাসে ৩হাজার ২৬২ টি গরু এসেছে। যা গেল বছরগুলোর তুলনায় খুবই কম। বর্তমানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ভারত থেকে গরু পারাপারে কড়াকড়ি করায় গরু আসা একেবারেই কমে গেছে। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশ জানান, আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায় ৫৩ হাজার ২৯৯টি গরু-মহিষ ও ছাগল কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় কোরবানির চাহিদা রয়েছে ৪৩হাজার ২০০ টি কোরবানী উপযুক্ত পশু। সেই হিসেবে জেলার কোরবানির চাহিদা মিটিয়েও ১০ হাজার ৯৯টি গরু-মহিষ ও ছাগল উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানান তিনি। তবে ভারত থেকে গরু না আসায় দেশিয় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে বলেও জানান প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা।