২০১৩ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া মুমিনুল হক এই প্রথমবারের মতো দল থেকে বাদ পড়লেন। আর তার বাদ পড়ার বিষয়টি কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না ক্রিকেট ভক্তরা। অবশ্য না মেনে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে ভক্তদের। কারণ এই লিটল মাস্টারের ব্যাট থেকে ক্যারিয়ারের ২২ টেস্টে গড় রান এসেছে ৪৬.৮৮ করে। এসেছে ১১টি হাফ সেঞ্চুরি ও ৪টি সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের শুরুতে কেউ কেউ তাকে ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গেও তুলনা করেছিলেন। আর এই মুমিনুলই বাদ পড়লেন পারফরম্যান্সের অজুহাতে!
‘সৌম্য সরকার কোনো যুক্তিতে মুমিনুল হক কিংবা মাহমুদুল্লাহর চেয়ে টেস্টে ভালো ব্যাটসম্যান কেউ কী বুঝাতে পারবেন?’ ফেসবুকে এভাবেই মন্তব্য প্রকাশ করছেন নয়ন নামের এক ক্রিকেট প্রেমী।
মেহেদি হাসান নামে একজন স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমাদের ডন ব্র্যাডম্যান মমিনুল হক। টেস্টে এই লিটল মাস্টারের ব্যাটিং গড় ছিলো প্রায় ৬৩। আর তাকেই স্কোয়াডে রাখলেন না নির্বাচকরা। ‘
ইশতিয়াক নামের একজন লিখেছেন,’মুমিনুল হক এর মতন খেলোয়াড় ১৪ জনের স্কোয়াডেই নেই… ভাবতে খুব খারাপ লাগতেছে যে এখন বাংলাদেশের সবচে বেশি গড় কিন্তু তার। ‘
এরকম হাজারো সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সবই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের স্কোয়াড থেকে মুমিনুল ও মাহমুদউল্লাহর বাদ পড়া নিয়ে।
এদিকে, টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান মুমিনুল হকের বাদ পড়ায় দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। ক্রিকেটপ্রেমীদের পাশাপাশি সংবাদকর্মীদের কাছেও মুমিনুলের বাদ পড়া ছিল প্রধান একটি প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের জবাব দিতে সংবাদ সম্মেলনে হিমশিম খেত হল প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিনকে। বলা বাহুল্য যে, নির্বাচক হিসেবে প্রথমবার এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়লেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক।
মুমিনুল বাদ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক বলেন, পারফর্মেন্সের জন্যই বাদ পড়েছেন মুমিনুল। তার ভাষায়, ‘মুমিনুলের সামগ্রিক যে ফর্ম, আমাদের কাছে যে পরিসংখ্যান আছে… জানুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজ পর্যন্ত, ছয় ইনিংসে ওর একটি মাত্র ফিফটি। এ পারফরম্যান্সের জন্যই ওকে রাখা হয়নি। তারপরও আমাদের পরিকল্পনায় আছে, প্রস্তুতির মধ্যেই আছে। যখন-যাকে দরকার, তখন ব্যবহার করা হবে। ‘
এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের বাদ পড়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা সেই প্রশ্নও ওঠে সংবাদ সম্মেলনে। কিন্তু মিনহাজুল আবেদিন তা সরাসরি নাকচ করে দেন।
তিনি বলেন, একমাত্র কারণ হলো পারফর্মেন্স। কিন্তু ঘরের মাঠে ইংল্যন্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ইনিংস ছিল মুমিনুলের। আর অজিরাও খেলতে এসেছে বাংলাদেশেই। এটা মনে করিয়ে দিতেই প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘সেটা এক বছর আগে, এরপর আমরা বেশ কিছু টেস্ট খেলেছি। সামগ্রিক পারফরম্যান্স বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘ এমন সময় প্রশ্ন আসে, মুমিনুলকে বাদ দেওয়া আসলে কার সিদ্ধান্ত? নির্বাচকমন্ডলী নাকি টিম ম্যানেজম্যান্টের? এই প্রশ্নটির উত্তর বেশ সাবধানেই দিলেন তিনি। বললেন, ‘আমাদের প্রধান কোচ কিন্তু নির্বাচক প্যানেলের অন্তর্ভুক্ত। টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলেই পারবে না। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘
প্রশ্নোত্তর পর্বের এক পর্যায়ে কিছুটা রেগে গিয়ে মিনহাজুল আবেদিন বলেন, আপনারা মুমিনুলকে নিয়ে যদি এভাবে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে কিন্তু উত্তর দিতে পারব না। কারণ অনেক কিছু আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একজনকে নিয়ে এভাবে জিজ্ঞেস করতে পারেন না।
এক পর্যায়ে তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় ১৯৯৯ বিশ্বকাপের কথা। ওই বিশ্বকাপের দল থেকে প্রথমে বাদ পড়েছিলেন তখনকার জাতীয় দলের ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদিন। শেষ পর্যন্ত জনতার দাবি আর সংবাদমাধ্যমের চাপে তাকে বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সেই ঘটনা যদি সমালোচনার জন্ম দিয়ে থাকে তাহলে আজ মুমিনুলের বাদ পড়া সমালোচনার জন্ম দেবেনা কেন?
মিনহাজুল সরাসরি প্রশ্নটির কোনো উত্তর না দিয়ে অনেকটা অধৈর্য্য হয়ে বললেন, এভাবে আমাকে বললে সেটা ঠিক হবে না। আমাদের প্রধান কোচ এখানে আছেন, উনাকেও ব্যাপারটি জিজ্ঞেস করতে পারেন।
কিন্তু সাংবাদিকদের তোপ থামল না। সর্বশেষ দুই টেস্টে হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি মুমিনুল। কিন্তু তার আগের ১১ টেস্টে টানা পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস আছে তার। যেটা একটা রেকর্ডও বটে। এছাড়া তার জায়গায় যে দুজনকে ভাবা হচ্ছে, সোম্য আর সাব্বির, তারাও তো দীর্ঘদিন ফর্মহীনতায় ভুগছিলেন। তাদের ফর্মে ফেরানোর জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে মাত্র দুটি ম্যাচের জন্য বাদ পড়বেন মুমিনুল?
জবাবে আবারও পরিসংখ্যানের আশ্রয় নিলেন প্রধান নির্বাচক। বললেন, ‘মুমিনুলের প্রসঙ্গে আপনারা ওর পরিসংখ্যানের দিকে যাচ্ছেন না। গত এক বছরে ওর গড় ২৮-এ নেমে এসেছে। ও যেভাবে ওর ক্যারিয়ার শুরু করেছিল, সেই মাত্রায় কিন্তু নেই। একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে এরকম আলোচনা আসলে ঠিক নয়। ওকে নিয়ে কিন্তু আমাদের সামনে অনেক চিন্তা ভাবনা আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ওকে যেন নিতে পারি সেজন্য আলোচনা করছি। এমন নয় যে ওর ক্যারিয়ার আমরা এখানেই শেষ করে দিচ্ছি। ‘
শেষের দিকে মিনহাজুল আরও বললেন, তারা মুমিনুলের ফর্ম ফিরিয়ে আনতে খুব চেষ্টা করছেন। দেশের মাটিতে মুমিনুল দুর্দান্ত খেলেছে সেটাও মেনে নিলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, মুমিনুলকে কিন্তু মোরালি আমরা সব সময় সাপোর্ট করেছি। আমি, হাবিবুল বাশার সুমন সব সময় ওকে সাপোর্ট করি, আলোচনা করি। ওর ব্যাটিং দেখি। যথেষ্ট আলোচনা করি। শ্রীলঙ্কা থেকে ওকে ফিরিয়ে আনি ওকে আমরা ইমার্জিং কাপে খেলার সুযোগ তৈরি করে দেই। বিকল্প হিসেবে সবসময় ওকে চিন্তা ভাবনা করেছি। সামনে দেখবেন আমরা ওকে নিয়ে কী করি। হয়ত পরের সিরিজেই ওকে দেখতে পারেন।