সাতক্ষীরায় ’১৩ সালের নাশকতাকারীরা ফের সংঘটিত হচ্ছে, নিয়মিত হচ্ছে গোপন বৈঠক নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরায় নাশকতা সৃষ্টিকারী জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা এতদিন আত্মগোপনে থাকার পর ফের সংঘটিত হচ্ছে। গোপন বৈঠক করছে প্রায় রাতে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাতক্ষীরায় দাঙ্গা সৃষ্টিকারী ও তাদের ক্যাডাররা প্রকাশ্যে চলাফেরা শুরু করেছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে জামাত শিবির অধ্যুষিত যে কয়টি ইউনিয়ন আছে তার মধ্যে ফিংড়ি ইউনিয়ন অন্যতম। ২০১৩ সালে সাতক্ষীরা জেলায় জামাত শিবিরের নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের অধিকাংশের বাড়ি ফিংড়িতে। প্রতিদিন ইঞ্জিন ভ্যান, নছিমন, করিমন ও পিকআপ ভ্যানে করে শত শত সশস্ত্র ক্যাডার সাতক্ষীরা শহরে দাঙ্গা সৃষ্টি করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর প্রতিরোধের কারণে কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরবর্তীতে জেলার ৭৮ টি ইউনিয়নের যৌথ বাহিনী জামাত শিবিরের ক্যাডারদের গ্রেফতার অভিযান চালালেও অদৃশ্য কারণে আশানুরুপ কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি ফিংড়ীতে। যার কারণে জেলার অন্যান্য ইউনিয়নের দাঙ্গা সৃষ্টিকারীরা ফিংড়ী ইউনিয়নকেই তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল বলে মনে করে। ফিংড়ী ইউনিয়নকে বর্তমানে তারা তাদের গোপন বৈঠক এবং মিলন কেন্দ্র হিসাবে বেছে নিয়েছে বলে এলাকার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। আত্মরক্ষার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্রগুলো বলছে, প্রায় গভীর রাতে মটরসাইকেল, মাইক্রোযোগে দাড়ি-টুপি পরা অপরিচিত ব্যক্তিরা এলাকায় এসে চিহ্নিত জামাত নেতা ও নাশকতায় নেতৃত্বদানকারীদের সাথে মিলিত হচ্ছে আবার ওই রাতেই চলে যাচ্ছে। ফিংড়ী ইউনিয়নের গাভা গ্রামের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শান্তিবাহিনীর (পিচ কমিটি) কমান্ডার সাজ্জাত হাজী এসময় ফিংড়ী, গাভা, ব্যাংদহা এলাকায় হিন্দুদের বাড়ি ঘর লুটপাট করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এখনও হিন্দু পাড়াগুলো সাজ্জাত হাজীর তা-বের কথা মনে পড়লে শিউরে উঠে। এসময়ের লটুপাটের অর্থ দিয়েই আজ শত শত বিঘা জমির মালিক সে। তার পুত্র জামাতের দুর্ধর্ষ ক্যাডার আব্দুল হক। ২০১৩ সালে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের নেতৃত্বদানকারী এই ক্যাডার এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফিংড়ী ইউনিয়নের জামাত-শিবিরের এই নেতার নেতৃত্বে প্রায় রাতে গোপন বৈঠক হয় গাভা দাখিল মাদ্রাসায়। কারণ ওই মাদ্রাসার শিক্ষক জামাত ক্যাডার আব্দুল হক। মাদ্রাসার সুপার গাভা গ্রামের ওয়াজেদ মোড়লের ছেলে মাওঃ আজাদুল ইসলাম নাশকতা মামলার আসামি। কয়েকদিন পূর্বে সে আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে আছে। শেখ জাফর আলী পিতা মৃত শাহীন ঢালী সাং- গোবড়দাড়ি একই গ্রামের রফিক ঢালীর পুত্র এর আশরাফ আলীর শ্বশুর বুধহাটা ইউনিয়নের নওয়াপাড়া গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক। আশরাফ আলী জামাতের একজন দুর্ধর্ষ ক্যাডার। গোবরদাড়ি গ্রামের শফিউর রহমান, পিতা মৃত বেলায়েত সানা। বালিথা গ্রামের আপিল উদ্দীনের ছেলে রাজাকার কমান্ডার আনোয়ার উদ্দীন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে যাওয়ার পথে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণ করে সর্বস্ব করে লুট করে। হিন্দু নারীদের উপর অত্যাচার করার একাধিক অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। জোড়দিয়া গ্রামের জাফর আলীর ছেলে আকতারুল ইসলাম ও দক্ষিণ ফিংড়ী গ্রামের জুম্মান আলী জামাত ইসলামীর রোকন। ফিংড়ী ইউনিয়নের তিন গ্রামের ২০১৩ সালে নাশকতা নেতৃত্বদানকারী এসব নেতারা বর্তমানে ইউনিয়নব্যাপী দাপিয়ে সাংগঠনিক কর্মকা- চালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। তারা আরো জানান, প্রায়ই গভীর রাতে অপরিচিত দাড়ি-টুপিওয়ালা লোকেরা এদের সাথে বৈঠক করে। ঘটনাগুলো স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানলেও প্রাণের ভয়ে কেউই বলতে সাহস পায় না। ফিংড়ী ইউনিয়েন জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছ। জামাত শিবিরের তালিকাভুক্ত এই সব ক্যাডারদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা ফের সংঘটিত হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানায়। এব্যাপারে ফিংড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও শুনেছি জামাত শিবির সংঘটিত হচ্ছে। বিষয়গুলো আমাদের দলীয় ফোরামে জানিয়েছি। উল্লেখিত ব্যক্তিরা জামাত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে তিনি জানান। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোও সঠিক বলে জানিয়েছেন তিনি। এব্যাপারে ফিংড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রাক্তন ইউপি মেম্বর লুৎফর রহমান জানান, উল্লেখিত ব্যক্তিরা জামাতের রাজনীতির সাথে জড়িত। এদের নেতৃত্বে ব্যাংদহা বাজারে হিন্দুদের দোকানে আগুন দিয়েছিল ২০১৩ সালে। এবং এরা ওই সময় সংঘটিত হয়ে ফিংড়ী বাজার অভিমুখে আসার সময় স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা প্রতিরোধ করি। এরা আমার বাড়ি ভাংচুর করতেও চেয়েছিল কিন্তু জনগণের প্রতিরোধের কারণে তারা পারেনি।