জাতীয়

রাজ্জাক থেকে যেভাবে নায়করাজ

By Daily Satkhira

August 22, 2017

নায়করাজের মৃত্যুতে শোকাহত চলচ্চিত্র পরিবার। রাজ্জাকের মৃত্যুতে শোকাহত ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাক সোমবার (২১ আগষ্বট) সন্ধ্যায় না ফেরার দেশে চলে গেছেন। সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬বছর।

নায়করাজ দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। এর আগে বেশ কয়েক দফা তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন ইউনাইটেড হাসপাতালে। সম্প্রতি আবার শরীর খারাপ হলে তার পরিবার তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। অবশেষে আজ সোমবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

নায়করাজ বলতে এক জনকেই বোঝানো হয়। তিনি হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক আবদুর রাজ্জাক। তিনি শুধু অভিনেতাই ছিলেন না, তিনি একাধারে প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে ভূমিকা পালন করেছেন।

ষাটের দশকের মাঝের দিকে তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ষাটের দশকের বাকি বছরগুলোতে এবং সত্তরের দশকেও তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রধান অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হত।

রাজ্জাক কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্বরসতী পূজা চলাকালীন সময়ে মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য তার গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে কেন্দ্রীয় চরিত্রের (নায়ক) জন্য বেছে নেন। এরপর থেকে তিনি কলকাতার মঞ্চ নাটকে জড়িয় পড়েন।

১৯৬৪ সালের দাঙ্গার উত্তাল সময়ে নতুন জীবন গড়তে একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে তিনি পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন।

রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।

সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগড় লেন চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তীতে কার বউ, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশন-সহ আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করে ফেলেন।

পরে ১৯৬৬ সালে বেহুলা চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন সদর্পে। কঠোর পরিশ্রম আর জীবনের প্রতিটি মহুর্তের সঙ্গে সংগ্রাম করে উপাধি পেয়েছেন নায়ক রাজ নাজ্জাক।

নায়ক রাজ প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র।

১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সঙ্গেই ঢালিউডে সেরা নায়ক হয়ে অভিনয় করেন রাজ্জাক। এর মধ্য দিয়েই তিনি অর্জন করেন নায়করাজ রাজ্জাক খেতাব। অর্জন করেন একাধিক সম্মাননা। এছাড়াও রাজ্জাক জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করেছেন।

সেরা অভিনয়ের জন্য এ কিংবদন্তি নায়ক তিনি বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৭৬, ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৪, ১৯৮৮ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান। এছাড়া তাকে ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়।

পাশাপাশি সেরা অভিনয়ের জন্য নায়করাজকে ২০০৩ ইন্দো-বাংলা কলা মিউজিক পুরস্কার, খান আতাউর রহমান আজীবন সম্মাননা, ২০০৯ বাচসাস আজীবন সম্মাননা (চলচ্চিত্র), ২০১২ ইফাদ ফিল্ম ক্লাব আজীবন সম্মাননা, একই বছর ব্যাবিসাস আজীবন সম্মাননা ও ২০১৪ মেরিল প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়।

রাজ্জাকের সেরা সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- আখেরি স্টেশন, বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, ক খ গ ঘ ঙ, জীবন থেকে নেয়া, নাচের পুতুল, অশ্রু দিয়ে লেখা, অবুঝ মন, রংবাজ, আলোর মিছিল, কি যে করি, বাহাদুর, অনন্ত প্রেম, অশিক্ষিত, অগ্নিশিখা, ছুটির ঘণ্টা, মহানগর, বড় ভাল লোক ছিল, নাজমা, চন্দ্রনাথ, শুভদা, রাজলক্ষী শ্রীকান্ত, যোগাযোগ, অন্ধ বিশ্বাস, বাবা কেন চাকর