জাতীয়

কলকাতার গণমাধ্যমে নেই নায়করাজের মৃত্যুর সংবাদ!

By Daily Satkhira

August 23, 2017

বাংলাদেশ ও কলাকাতা। দুই বাংলাই খ্যাতি অর্জন করেছেন প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাক। শুধু খ্যাতি নয়, কলকাতাতেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন এই নায়করাজ। গত ২১ আগষ্ট (সোমবার) রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

নায়করাজের মৃত্যুতে শোকাহত চলচ্চিত্র পরিবার। রাজ্জাকের মৃত্যুতে শোকাহত বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। অভিনয় জীবনে অনেক শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছেন এই অভিনেতা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক।

দেশভাগের সময় এপারে এসেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্ম নেওয়া আব্দুর রাজ্জাক। যিনি স্বীয় মেধা আর শ্রমে এরপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের প্রবাদ পুরুষ হিসেবে, সবাই তাকে আদর আর শ্রদ্ধায় ডাকতো নায়করাজ! পরবর্তী সময়ে ঢাকার পাশাপাশি কলকাতার ছবিতেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলা সিনেমার এই কিংবদন্তী অভিনেতা রাজ্জাকের মৃত্যুর সংবাদ কলকাতার প্রথম সারির অধিকাংশ গণমাধ্যমে নেই বললেই চলে।

আনন্দবাজার পত্রিকা, এবেলা, বর্তমান, সংবাদ প্রতিদিন, কলকাতা২৪, প্রভৃতি গণমাধ্যমে নায়করাজের মৃত্যুর কোনো সংবাদ ছাপা হয়নি। কেবল আজকাল, সংবাদ প্রতিদিন-এ দুটি খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি অভিনেত্রী জয়া আহসানের লেখা। অবশ্য আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন সংস্করণে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

বরাবরই কলকাতার গণমাধ্যমে অবহেলিত বাংলাদেশের তারকা শিল্পীরা। যৌথ প্রযোজনাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কলকাতার শিল্পীদের নিয়ে ঢাকার গণমাধ্যমে মাতামাতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের আলোচিত তারকাদের বেলায়ও তারা থাকে নির্বিকার। কলকাতার পাঠক সমাজে প্রভাববিস্তারকারী বাংলা ভাষার জনপ্রিয় লেখক বাংলাদেশি হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর সংবাদও সেখানকার পত্রিকাগুলোতে গুরুত্ব পায়নি।

এবার নায়করাজের মৃত্যুর পর বিষয়টি ফের আলোচনায় এলো। প্রসঙ্গত, একবার হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখা হয়েছিল বাংলাদেশি প্রবন্ধকার হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। অথচ, ওই সময়টায় আনন্দবাজারের পূজাবার্ষিকীগুলো হুমায়ূনের উপন্যাস ছাড়া কল্পনাও করা যেতো না- এ ঘটনায় তখন ব্যাপক প্রতিবাদ-সমালোচনা হয়েছিল।

এদিকে, নায়করাজের মৃত্যুতে ব্যক্তিগতভাবে কলকাতার শিল্পীদের কেউ কেউ ফেসবুকে শোক জানিয়েছেন। এদের মধ্যে অন্যতম প্রসেনজিৎ। তিনি রাজ্জাক সম্পর্কে লিখেছেন, “তার সঙ্গে আমি অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। তার আকস্মিক মৃত্যু শুধু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে শূন্য করে দেয়নি, আমার হৃদয়কেও শূন্য করে দিয়ে গেছে। আমার মন ভেঙে যাচ্ছে তার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে। ওপারে ভালো থাকবেন রাজ্জাক সাহেব।

প্রসঙ্গত:- মঙ্গলবার বেলা ১১টার সময় নায়করাজ পৌঁছান তাঁর কর্মক্ষেত্র বিএফডিসিতে। ততক্ষণে তেতে উঠেছে রোদ্দুর। আলিফ মেডিকেল সার্ভিসের শীতল গাড়ি নায়ককে নিয়ে গিয়ে থামে এফডিসির প্রশাসনিক ভবনের সামনে। সেখানে প্রস্তুত মঞ্চ, শোকের কালো চাদরে ঢাকা। সেই মঞ্চে নামানো হয়নি নায়ককে। আজ তিনি পা রাখেননি কোথাও। মঞ্চে রাখা হয়েছে ফুল। শীতল গাড়িটি সামনে রেখেই জানাজায় দাঁড়িয়ে পড়েছেন চলচ্চিত্রের স্বজনেরা। অনেকের চোখেই জল।

শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরকে দেখা যায় নায়করাজকে জানানো শ্রদ্ধার ফুলগুলো সরিয়ে সরিয়ে রাখছিলেন। জায়গা করে দিচ্ছিলেন অন্য ফুলগুলোর জন্য। সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান সারি বেঁধে নায়করাজকে একপলক দেখার জায়গা করে দিচ্ছিলেন সবাইকে। বড় পর্দার শত-শত মুখ তখন সেখানে, একটি মুখ এক পলক দেখার জন্য উন্মুখ।

এফডিসিতে পড়ানো হয় নায়করাজের জানাজার নামাজ। এই প্রিয় অভিনেতাকে শেষ বারের শ্রদ্ধা জানাতে এফডিসি প্রাঙ্গনে ছুটে আসেন সর্বস্তরের লোকজন। নায়করাজের জানাজার নামাজে উপস্থিত ছিলেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, খ্যাতিমান অভিনেত্রী শাবানা, অভিনেত্রী রজিনা, অভিনেত্রী ববিতা, বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, চিত্র নায়ক শাকিব খানসহ অন্যান্য শিল্পীরা।

এফডিসি থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয় নায়করাজকে। সেখানে নায়কের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ ও বিশিষ্টজনরা।

আওয়ামী লীগের পক্ষে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। বিএনপির পক্ষে আসেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। শহীদ মিনারে সংগঠনগুলোর মধ্যে আসে বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, অভিনয় শিল্পী সংঘ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, এনটিভি, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ টেলিভিশন, ওয়ার্কার্স পার্টি, দৃষ্টিপাত নাট্য সংসদ, মুক্তধারা সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, বাউল একাডেমি ফাউন্ডেশন, যুব সমিতি, সুবচন নাট্য সংসদ, দনিয়া সাংস্কৃতিক জোট, ডিরেক্টরস গিল্ড, এনটিভি, দেশ টিভি, প্রজন্ম ৭১, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিসহ আরও বেশ কিছু সংগঠন।