আসাদুজ্জামান : রামদা ও বল্লমের মুখে নারী পুরুষসহ পরিবারের দশজনকে বাড়ির মধ্যে আটকে রেখে মারপিট করে সাতক্ষীরার কলারোয়ার আবদুল খালেকের পৈতৃক জমি দখল করে নিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। আর লাইসেন্স করা অস্ত্র উঁচিয়ে এ ঘটনার প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব দিয়েছেন কলারোয়ার যুগিখালি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান। দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার বাকিবিল্লাহ, আলতাফ হোসেন এবং জামায়াত ও শিবির থেকে হঠাৎ আওয়ামী লীগে যোগদানকারী লাঠিয়ালদের নিয়ে বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে এই দখলী তা-ব। তারা খালেকের জমিতে জোর করে প্রাচীর নির্মান করে। এ সময় আবদুল খালেক ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ির মধ্যে আহত অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়েছিলেন। তবে যুগিখালি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান বলেন, আমি কোনো সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দেইনি। গোলমালের খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। সাথে পুলিশ ছিল। আমাদের সামনে কোনো মারপিটও হয়নি। এ ঘটনা নিয়ে আমরা আগে কয়েকবার সালিশ করেছি। মোকাররম আলি তার পৈতৃক জমিতে প্রাচীর দিচ্ছিলেন’। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কামারালি গ্রামের বাবর আলির ছেলে মোকাররম আলি ও তার ভাই আবদুস সোবহানের ছেলে আবদুল খালেকের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধ শেষ পর্যন্ত দেওয়ানি মামলায় ঠেকেছে। এরই মধ্যে নাশকতার একটি মামলায় কিছুদিন আগে আবদুল খালেক জেলে গেলে সেই সুযোগে চেয়ারম্যান রবিউল হাসানের নির্দেশে প্রতিপক্ষের মোকাররম আলি সেখানে ইটের প্রাচীর তৈরির উদ্যোগ নেয়। আবদুল খালেক বলেন, মঙ্গলবার চেয়ারম্যান কয়েক গ্রামে খবর দিয়ে তার সহযোগী জামায়াত ও শিবির থেকে হঠাৎ আওয়ামী লীগে নাম লেখানো শতাধিক ক্যডার ভাড়া করে আনেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের জড়ো করা হয়। বুধবার ভোরে তারা শুরু করে প্রাচীর নির্মান। আবদুল খালেক অভিযোগ করে বলেন এতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে রবিউল বাহিনীর সিরাজুল, মাসুদ, আলতাফ , আরশাদ, মোকাররম, বাকিবিল্লাহ, যুবলীগের রেজাউলসহ ৫০ জনের বেশি লাঠিয়াল রামদা, ড্যাগার বল্লম ও ইটপাটকেল নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় চেয়ারম্যান রবিউল হাসান ঘটনাস্থলে বসে থেকে তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র দিয়ে হুমকি প্রদর্শন করেন। তিনি খালেক ও তার সমর্থকদের মাথা ইট দিয়ে থেতলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে ক্যাডাররা খালেকের বাড়ির ভেতর ঢুকে গিয়ে শুরু করে মারপিট ও তান্ডব। এতে গুরুতর আহত হন আবদুল খালেক, আবদুল আলিম, সুজন, আজিজুল, আবু তালেব, আকলিমা খাতুন, রওশনারা খাতুন, মঞ্জুয়ারা বেগম, বিলকিস বেগমসহ অনেকেই। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান বাহিনীর সন্ত্রাসীদের মহড়ার মুখে তারা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য কলারোয়া হাসপাতালে যেতে পারেন নি। সকাল থেকে বিকাল অবধি তারা সবাই নিজেদের ঘরে অবরুদ্ধ ছিলেন। জানতে চাইলে প্রতিপক্ষের মোকাররম আলি বলেন, আবদুল হামিদ তার অংশের দেড় শতক জমি বিক্রি করেছিলেন মোকাররমের বাবা বাবর আলির কাছে। কিন্তু ওই জমি দখল নেওয়া যাচ্ছিল না। তিনি বলেন, আজ চেয়ারম্যান রবিউল হাসান ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ৪০ জন লোক এনে আমার জমি দখল করিয়ে দিয়েছেন। চেয়ারম্যানকে দিতে হয়েছে দুই লাখ টাকা। তবে চেয়ারম্যান এসব কথা অস্বীকার করলেও দখলে নেতৃত্ব দেওয়া চেয়ারম্যান সহযোগী সোহাগ বলেন, দখল দিতে চেয়ারম্যান মোকাররমের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েছেন। অথচ আমাদের ৪০ জনের প্রত্যেককে দিয়েছেন ৫০০ টাকা করে। দুপুরে তারা সবাই ঘটনাস্থলে বসে খাবার খেয়ে আবার কাজ শুরু করেন। জোর করে জমি দখল এবং প্রাচীর তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, বিষযটি মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেন নি। তিনি বলেন এখানে আওয়ামী লীগের দুই নেতা দুই পক্ষ নিয়ে আমাদের চাপের মধ্যে রেখেছেন। এখন দেখছি শাঁখের করাত। আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে ৮ টি নাশকতার মামলা রয়েছে। কলারোয়ার সরসকাঠি পুলিশ ক্যাম্প ইন চার্জ উপপরিদর্শক ( এসআই) তারেক বলেন খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। জমি মোকাররমের প্রাপ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আমার সামনে কোনো সন্ত্রাসী কাজ করে নি কেউ। আবদুল খালেক সাংবাদিকদের জানান, তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আতংকের মধ্যে রয়েছেন। চেয়ারম্যান পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার বাহিনী নিয়ে।