আজকের সেরা

ধর্ষণে অভিযুক্ত ভারতীয় ধর্মগুরুর রায় ঘিরে সহিংসতায় নিহত ৫

By Daily Satkhira

August 25, 2017

বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং-এর রায় ঘিরে উত্তাল হয়ে পড়েছে ভারতের উত্তরাঞ্চল। নিজ আশ্রমে দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে শুক্রবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) একটি আদালত। এরপরই পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে তাণ্ডব শুরু করে তার অনুসারীরা। তারা রাস্তায় যানবাহন ভাঙচুর এবং অন্তত দুটি রেলওয়ে স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে রাম রহিমের পাঁচ অনুসারী নিহত হন। সংঘর্ষ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পাঞ্জাবের বিভিন্ন এলাকায় টিয়ার গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ করে রাম রহিমের ক্ষুব্ধ সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। দুই রাজ্যের নিরাপত্তা রক্ষায় মাঠে নেমেছে ৫৭ হাজার পুলিশ সদস্য। তাদের সঙ্গে রয়েছে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য।

আগামী সোমবার রাম রহিমের সাজা ঘোষণা করবেন উচ্চতর আদালত। এতে তার সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগেই হরিয়ানার আদালত এলাকায় পৌঁছেছেন দুই লক্ষাধিক রাম রহিম সমর্থক। এর মধ্যে শুধু আদালতের কাছাকাছি এলাকাতেই জড়ো হয়েছেন তার প্রায় ৪০ হাজার ভক্ত। হাতে মোটা বাঁশের লাঠি বা হকিস্টিক নিয়ে শহরজুড়ে মহড়া দিচ্ছেন তারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সিবিআই কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর অবশ্য অপরাধে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন গুরমিত রাম রহিম সিং। এরইমধ্যে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে হরিয়ানার পুলিশ। তবে তাকে সেনা হেফাজতে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

গুরমিত রাম রহিম সিং-এর ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাম রাখা হয়েছে তার হরিয়ানার আশ্রমের নাম অনুসারে। এ সম্প্রদায়ের নাম ‘ডেরা সাচ্চা সৌদা’। এ সম্প্রদায়ের অনুসারীর সংখ্যা পাঁচ কোটি। প্রশাসনের আশঙ্কা, প্রত্যাশিত রায় না পেলে রাম রহিমের অনুসারীরা দুই রাজ্যে আরও ব্যাপক আকারে তাণ্ডব চালাতে পারে। কারণ ইতোপূর্বে তাদের দাঙ্গা বাধানোর রেকর্ড রয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের মধ্যে চলাচলকারী দুই শতাধিক ট্রেন চলাচল পরবর্তী তিনদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। পাঁচকুলা আর চন্ডীগড়ের স্টেডিয়াম ও স্কুলগুলোকে প্রশাসন নিজেদের দখলে নিয়ে অস্থায়ী কারাগার তৈরি করেছে, যাতে প্রচুর সংখ্যায় ওই ‘গুরু’র ভক্তদের গ্রেফতার করতে হলে তাদের রাখার ব্যবস্থা করা যায়।

প্রায় ১৫ বছর আগে রাম রহিমের এক সাবেক নারী অনুসারী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। ২০০২ সালে করা ওই মামলায় বলা হয়, হরিয়ানার রাম রহিমের নিজ আশ্রমেই তার হাতে ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী। গত ১০ বছরে প্রায় ২০০টি শুনানির পর শুক্রবার রায় দেন (সিবিআই)-এর আদালত।

প্রশাসন প্রথমে আদালত সংলগ্ন এলাকায় রাম রহিম ভক্তদের বিপুল সংখ্যায় জমায়েত নিয়ে ব্যবস্থা না নিলেও বৃহস্পতিবার পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশে রাত থেকে নিরাপত্তার কড়াকড়ি করে। এজন্য চণ্ডীগড়-পাঁচকুলা পৌঁছানোর সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তল্লাশি চলতে থাকে সব গাড়িতে। রাতভর পুলিশ কর্মকর্তারা মাইক হাতে রাস্তায় ঘুরে বেড়েয়েছেন জমায়েত হওয়া ভক্তদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে।

অনেক রাতে গুরমিত রাম রহিম সিং-এর একটি ভিডিও বার্তা ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়, যাতে তিনি শান্তি বজায় রাখার এবং ভক্তদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ ভক্তর কাছেই সেই বার্তা পৌঁছায়নি বলে প্রশাসন মনে করছে।

গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন গুরমিত রাম রহিম সিং। বিজেপির অনেক নেতা-মন্ত্রী-সংসদ সদস্যই ওই ধর্মগুরুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা সামাজিক মাধ্যমে নানা সময়ে প্রকাশ করেছেন। ভারতের অজস্র গডম্যান বা ধর্মগুরুর মধ্যে রাম রহিম ব্যতিক্রম। তিনি একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, সিনেমার নায়ক ও পরিচালক। সেই সব চলচ্চিত্রে নানা রকম স্টান্ট দেখান তিনি। হরিয়ানার সিরসায় তার ডেরা সাচ্চা সৌদা আশ্রমের প্রাঙ্গণে নিয়মিত বসে পপ কনসার্ট। সেখানে গান রাম রহিম সিং নিজেই। তার তুমুল জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘ইউ আর মাই লাভ চার্জার’।

‘এমএসজি: মেসেঞ্জার অব গড সিরিজে’র যে সিনেমাগুলোতে বাবা রাম রহিম নিজেই নায়ক গুরুজির অভিনয় করেছেন, হাজার হাজার গাড়ির কনভয় নিয়ে সেই ছবি দেখতে এসে তার ভক্তরা একাধিকবার দিল্লির কাছে গুরগাঁও অচল করে দিয়েছেন! শিখ, হিন্দু, মুসলিম সব ধর্মের চেতনার মিশেলে তৈরি হয়েছে তার ধর্মীয় সম্প্রদায় ‘ডেরা সাচ্চা সৌদা’।

সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি, রয়টার্স।