আন্তর্জাতিক

ঘূর্ণিঝড় হার্ভের আঘাতে লণ্ডভণ্ড টেক্সাস

By Daily Satkhira

August 27, 2017

হ্যারিকেন হার্ভের আঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অঙ্গরাজ্যটির বেশকিছু জায়গায় চরম ধ্বংসাত্মক চিহ্ন রেখে গেছে হ্যারিকেন হার্ভে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কয়েক জায়গায় ভূমি ধস হয়েছে। ঘর-বাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়েছে। অসংখ্য গাছ উপড়ে গেছে, রাস্তা-ঘাটের পোস্ট ল্যাম্প ও দিক নির্দেশনার খুঁটি ভেঙ্গে পড়েছে।

ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। সঙ্গে মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। গত ১৩ বছরের মধ্যে দেশটিতে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে এটিকে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

হ্যারিকেন হার্ভে দেশটির মূলভূখণ্ডে আঘাত হানে শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১০ টার দিকে। ঘন্টায় ২০৯ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে হার্ভে টেক্সাসের উপকূলে আঘাত হানে। চার মাত্রার এই হ্যারিকেন টেক্সাস উপকূলের আরকানসাস এবং ওকনর বন্দরের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে স্থলে উঠে আসে। প্রাথমিকভাবে রকপোর্ট শহরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের খবর দিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। হাইস্কুল, হোটেল এবং অন্যান্য ভবনে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতি বেশি রকপোর্টে

ঘূর্ণিঝড় হার্ভে তার ভয়ানক রূপ সব থেকে বেশি প্রকাশ করেছে টেক্সাসের রকপোর্ট শহরে। এখানকার ঘর-বাড়ির ছাদ বাতাসে উড়ে চলে যায়। দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে শক্তিশালী বাতাস। এই তীব্রতার কথা অনুমান করে আগেই সেখান থেকে মানুষকে দূরে নিরাপদে সড়িয়ে নেয়া হয়েছিল।

অসংখ্য আহতের আশঙ্কা

স্থানীয় পত্রিকাগুলোর সংবাদে বলা হচ্ছে করপাস ক্রিস্টি শহরের প্রধান হাসপাতালে শুধু জরুরি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এভাবে অন্য হাসপাতাল গুলোতেও জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আহতের এই সংখ্যা বিশাল হবে এমনটি আশঙ্কা করে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

‘আমার ঘর-বাড়ি সব শেষ’

টেক্সাসের সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলো মধ্যে কেটি অন্যতম। সেখানকার এক গৃহহীন নারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ঘর-বাড়ি সব শেষ’।

ঝড়ের মধ্যেই তিন শিশুর জন্ম

প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝরের মধ্যেই করপাস ক্রিস্টি শহরে তিন নবজাতকের জন্ম হয়। এর মধ্যে দুইজনের জন্ম হয় একটি হাসপাতালে এবং অন্য আরেকজনের জন্ম হয় একটি বাসায়। জন্মগ্রহণকরা শিশুরা এবং তাদের মায়েরা সবাই ভাল রয়েছেন বলে স্থানীয় পত্রিকার সংবাদে বলা হচ্ছে।

ধীর গতি

ঘূর্ণিঝড় হার্ভে খুব ধীর গতিতে অতিক্রম করছে বলে একে ম্যারাথনের সঙ্গে তুলনা করেছে জাতীয় আবহাওয়া অফিস। তারা বলছে, স্পিন্ট দৌড়ের মতো এটি শেষ হবে না। এটি একটি ম্যারাথন। খুব শীঘ্রই শেষ হবে না। টেক্সাসবাসীকে কয়েকদিনের চরম দুর্যোগের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

আরও খারাপ অবস্থা সামনে অপেক্ষমান: টেক্সাস গভর্নর

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ এ্যাবট বলেছেন বিপদের এখনই শেষ নয়। সামনে আরও খারাপ অবস্থা আসছে।

প্রায় তিন লাখ বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন

টেক্সাসের ইলেকট্রিক রিলিয়াবিলিটি কাউন্সিল বলছে, তাদের দুই লাখ ৯৩ হাজার গ্রাহকের বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কবলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আরও অনেক বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

আগামী কয়েকদিনে হ্যারিকেন হার্ভে ধীরে ধীরে টেক্সাস উপকূল হয়ে লুজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের উপকূলের দিকে এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সময় হার্ভের প্রভাবে ওই উপকূলজুড়ে চার মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস ও ৯০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় লুইজিয়ানা ও টেক্সাসে দুর্যোগাবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এরই মধ্যে জরুরি উদ্ধারকর্মী ও ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক টুইটে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জরুরি উদ্ধারকর্মীদের প্রশংসা করে বলেন, “আপনারা দারুণ কাজ করছেন… বিশ্ব দেখছে! নিরাপদ থাকুন।”