এম. বেলাল হোসাইন : গ্রাহকদের কাছ থেকে অধিক অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতি নেতবৃন্দের বিরুদ্ধে। এছাড়া সমিতির অর্থ তছরুপসহ নানা অভিযোগ রয়েছেই। এসব ঘটনায় ইতোমধ্যে অবশ্য দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দের ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে ৬ জন্য সাধারণ সদস্য পদত্যাগও করেছেন। সূত্রে জানাগেছে, জমি রেজিস্ট্রি করতে প্রতি লাখে ইউনিয়নে হলে খরচ ৯ হাজার টাকা ও পৌরসভার মধ্যে হলে খরচ হয় ১১ হাজার টাকা। সেখানে দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ ইউনিয়ন পরিষদের জমি রেজিস্ট্রি করতে নেয় সাড়ে ১১ হাজার টাকা আর পৌরসভার মধ্যে রেজিস্ট্রি করতে নেয় সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। একটি সার্টিফাই কপি তুলতে খরচ হয় ৪৫০ টাকা। কিন্তু গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ১৫ থেকে ১৭ শত টাকা। এসব অতিরিক্ত টাকা সমিতিতে জমা না দিয়ে কিছু প্রভাবশালী দলিল লেখকরা নিজেদের পকেটে ভরেন। গ্রাম থেকে আসা দূর্বল প্রকৃতির দলিল লেখকরা বঞ্চিত হন। অসহায় দলিল লেখকের মাথায় ভর করে দলিল লেখক সমিতির কতিপয় কর্মকর্তা আজ লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমিতির কতিপয় সদস্যরা। সমিতির বাইরে থাকা কিছু দলিল লেখক দলিল করতে গেলে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলিল গ্রহিতা এবং দাতাদের সামনে অশ্লীল ভাষা গালিগালাজ করেন। পরবর্তীতে উক্ত দলিল লেখকের কাছে দাতা গ্রহিতা তো দূরের কথা কেউ কোন কাজের জন্য আসতে চায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য জানান, দলিল লেখক সমিতি কতিপয় কর্মকর্তার হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা ইচ্ছেমত নিজ স্বার্থে সমিতিকে ব্যবহার করছেন। সমিতি রেজিস্ট্রিশনকৃত হলেও আজও পর্যন্ত সমিতির নামে সমবায় অফিসে কোন একাউন্ট খোলা হয়নি। এ পর্যন্ত অডিট ও জমা দেননি তারা। এছাড়া সমিতির বর্তমান সভাপতি কুদ্দুস ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি সমিতিকে ব্যবহার করেন নিজ স্বার্থে এবং সমিতির অনেক অর্থ তারা তছরুপও করেছেন তারা। বিশেষ করে সমিতির সভাপতি কুদ্দুস সাহেব ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ৪লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাথ করেন। তবে তা থেকে মাত্র ১ লক্ষ টাকা সমিতির গত ২২ আগস্ট মিটিংয়ের রেজুলেশনের মাধ্যমে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছেন তারা। আর ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা মাফ করে দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে বার বার পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিতহ হলে সাব রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার সমিতির কর্মকর্তাদের সতর্ক করলে তারা সাব রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন হয়রানির ভয় দেখিয়ে তাদের জিম্মি করে রাখা হয়। সম্প্রতি একটি মারামারির ঘটনায় সমিতিতে ১ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে এবং তার মধ্যে থেকে বর্তমান ২জন কাউন্সিলরের নামেও খরচ দেখানো হয়েছে। সমিতির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এসব ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ৫ জন পদত্যাগ করার পর দলিল লেখক সমিতির নাসির, ইসতিয়াক ও মনি সকলের কাছে মাফ চেয়ে পুনরায় সকলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে সমিতির নামে কালেকশনগুলো করে থাকেন সমিতির উপদেষ্টা আবুল কাসেম। তিনি দলিল প্রতি ১০০ টাকা দীর্ঘ ৮ বছর যাবত এই কালেকশনের দায়িত্ব পালন করেন। এ থেকে তিনি ১৬ সালের ফেব্রয়ারী থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ থেকে ১৯ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে জানিয়েছেন একটি সূত্র। এছাড়া দলিলের কালেকশন করে থাকেন কাশেমেরই সহকারী সাচ্চু। তিনি শুধু কালেকশনই নয় তিনি শহরের বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজও করে থাকেন। যাতে তাদের এই নিরব চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে না পারেন। এছাড়া নকল তুলতে গেলে নকল নবিস সমিতির সভাপতি সুমন নামের এক ব্যক্তির হাতে টাকা না পৌছানো পর্যন্ত নকল তোলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রি অফিসের একটি গোপন সূত্র। এব্যাপারে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কুদ্দুসের এর সাথে মঙ্গলবার রাত ৮.৪৫ মিনিটের সময় যোগাযোগ করলে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমাদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা সমিতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথাবার্তা ছাড়া। আর বিস্তারিত জানতে তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বলেন। সমিতির উপদেষ্টা আবুল কাশেমের সাথে রাত ৯টার দিকে যোগযোগ করলে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ ৪ বছর যাবত হার্টের সমস্যায় রয়েছি। সুতরাং এধরনের টাকা পয়সায় বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। সভাপতির টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন এটা সঠিক নয়। তিনি কোন আত্মসাত করেননি। কিন্তু তিনি ১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকার হিসাব দিতে পারছিলেন না। তবে যেহেতু সকলের টাকা তাই তিনি ১লক্ষ টাকা দিতে সম্মত হয়েছেন। তিনিও অফিসে চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন। নকল নবিস সুমনের ব্যবহৃত ০১৭১৭ ১৪৯৪৯৮০২ নাম্বারে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।