ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে সোমবার হরিয়ানা রাজ্যের বিশেষ আদালত মোট ২০ বছরের জেলের সাজা শুনিয়েই ক্ষান্ত থাকেন নি। এমন সব মন্তব্য করেছেন বিচারক, যা একরকম কাঁপিয়ে দিয়েছে এই একদা প্রবল পরাক্রান্ত ধর্মগুরুকে।
১৫ বছর আগে নিজের আশ্রমেরই দুই সাধিকাকে ধর্ষণের মামলায় পৃথকভাবে ১০ বছর করে মোট ২০ বছরের সাজা শোনানোর আগে গুরমিত রাম রহিমকে বিচারক জগদীপ সিং বলেছেন:
• দোষী ব্যক্তি (গুরমিত রাম রহিম) একটা জঙ্গলি জানোয়ারের মতো কাজ করেছে। সে তার দুই পবিত্র সাধিকাকেও ছাড়ে নি।
• ওই দুই নির্যাতিতা গুরমিত রাম রহিমকে ঈশ্বরের সম্মান দিতেন, কিন্তু গুরমিত তাদের সঙ্গে সব চেয়ে গুরুতর অপরাধ করেছে।
• যে ব্যক্তির মানবিকতা বলে কিছু নেই, যার স্বভাবে দয়া-মায়া বলে কিছু নেই, তার প্রতি উদারতা দেখানো যায় না।
• একটা ধর্মীয় সংগঠনের প্রধান হিসাবে যে নিজেকে দাবী করে, তার এই অপরাধমূলক কাজ আসলে দেশের অন্যান্য পবিত্র, আধ্যাত্মিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আর ধর্মীয় সংগঠনগুলোকেও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
তাকে ১৫ লাখ রুপি করে ৩০ লাখ রুপি জরিমানাও করা হয়েছে।
গুরমিত রাম রহিম আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে যখন সবাই তাকে ধিক্কার দিচ্ছে, তার মধ্যেও তার ভক্তদের অনেকেই এখনও ওই ‘গুরু’র প্রতি রয়েছে শ্রদ্ধা, আস্থা।
এরকমই এক পরিবারের খোঁজ পেয়েছে বিবিসি, হরিয়ানার সিরসায় – ডেরা সাচ্চা সওদার মূল আশ্রমের কাছেই।
যুবক সোনু যাদব ডেরার স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন। ইংরেজিতেই কথা বলতে বেশী স্বচ্ছন্দ তিনি।
“বাবাজী প্রথম থেকেই ভাল শিক্ষা দিয়েছেন, সমাজের প্রতি নীতি-নৈতিকতা শিখিয়েছেন, মানুষের কোন পথে চিন্তাভাবনা করা উচিত, সেসব বলেছেন আমাদের। আমরা তাই উনাকে গুরু বলেই মানি,” বলছিলেন মি. যাদব।
শুধু সোনু নয়, তার পরিবারের তিনপুরুষই গুরমিত রাম রহিমের ভক্ত।
বিবিসি-র সঙ্গে কথার মাঝেই সোনুকে থামিয়ে দিয়ে তার মা সরোজ বলছিলেন, “গুরুজী আমাদের বাপ-মায়ের মতো। আমি উনার কাছে গত ২৬ বছর ধরে যাই। আমার বাচ্চাদের তিনি পড়িয়েছেন, যে কোনও রকম দু:খ-কষ্টে তিনি সহায় হতেন। নিজের বাবা মায়ের থেকেও উনাকে বড় বলে মানি আমরা।”
‘বাবার ডেরা’ই তাদের কাছে সব কিছু – সেটাই তাদের দুনিয়া।
সোনু কথায় কথায় বলছিলেন, “বাবাজী আমাকে তিনটে মন্ত্র শিখিয়েছেন, নেশা করবে না, মেয়েদের সম্মান করবে আর বড়দের শ্রদ্ধা করবে।”
ঘটনাচক্রে যে মেয়েদের সম্মান করতে সোনুকে শিখিয়েছেন গুরমিত রাম রহিম সিং, অন্যদিকে দুই নারী সাধিকাকেই ধর্ষণ করেছেন বলে আদালতে প্রমাণ হয়েছে।
সোনু আর তার পরিবার অবশ্য এখনও বিশ্বাস করেন না যে তাদের ‘গুরুজী’ ওই কাজ করে থাকতে পারেন।
“আমাদের গুরুজীর ওপরে পুরো বিশ্বাস আছে। তিনি চক্রান্তের শিকার হয়েছে। সব সংবাদ চ্যানেলে যা যা দেখানো হচ্ছে – সব মিথ্যা। আমরা ছয় কোটি মানুষ তার শিষ্য – আমরা সবাই ভুল?”
তাদের বিশ্বাস কিছুদিনের মধ্যেই নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বাইরে আসবেন তাদের ‘বাবা’ আর রাজনৈতিক দলগুলোর চক্রান্ত গোটা পৃথিবীর মানুষের সামনে তুলে ধরবেন।
তবে তার আগে অবধি আদালতের নির্দেশে সোনু যাদবের পরিবারের ‘গুরুজী’কে রোহটাকের জেলে অন্য কয়েদিদের মতো জেলের পোশাক পরে কম্বলে শুয়ে দিন কাটাতে হবে।