সেনাবাহিনীর নির্যাতন আর হত্যার মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসার সময় নাফ নদীতে নৌকা ডুবে নিহত আরো ১৭ রোহিঙ্গার লাশ ভেসে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা এলাকার নাফ নদী থেকে ১৬ জন এবং শাহপরীর দ্বীপ থেকে আরো একজন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরুর পর শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ পালিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসতে থাকে। এদের অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট নৌকায় করে নদী ও সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে নৌডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৪০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বুধবার টেকনাফ থেকে চারজন, গতকাল বৃহস্পতিবার ১৯ জন এবং আজ সর্বশেষ ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো।
ওসি আরো বলেন, ছোট ছোট একাধিক নৌকায় করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এ সময় প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কয়টি নৌকা বা কতজন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
এরপর ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তাকর্মীদের সংঘর্ষে প্রায় একশজন নিহত হন। এর মধ্যে ১২ নিরাপত্তাকর্মী ও বাকিদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করেছে মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতার কার্যালয়। এর পর থেকেই হাজার হাজার মানুষ মিয়ানমার থেকে নদী, সমুদ্র ও স্থলপথে বাংলাদেশে আসা শুরু করে। যদিও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সীমান্ত দিয়ে কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য মারা যান। অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনা ঘটে।
জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিগতভাবে নির্মূল করতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের গ্রামে আগুন দিয়ে বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে এক পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালের জুনেও মিয়ানমারে সম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আক্রান্ত রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। ওই সময় সরকার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শক্ত অবস্থান নেয়। যার ফলে ওই সময়ে সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা পুশব্যাক করা হয়।