নতুন করে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের মাঝে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ (মঙ্গলবার) থেকে মিয়ানমার সফর করছেন। তার সফরের সময় যত এগিয়েছে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা বিরোধী কথাবার্তাও শোনা গেছে। ২৫মে আগস্ট রাখাইন রাজ্যের বেশ কটি পুলিশ ফাঁড়িতে সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারত সবসময় মিয়ানমারের পাশে থাকবে।” তারও আগে ভারতের বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজুজু ঘোষণা করেন, ভারতে বসবাসরত ৪০হাজার রোহিঙ্গার সবাইকে বহিষ্কার করা হবে। যদিও ভারতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৬০০০ জাতিসংঘ নিবন্ধিত শরণার্থী, তবুও মি রিজুজু বলেন, “জাতিসংঘের নিবন্ধনের কোনো অর্থ নেই। আমাদের কাছে ওরা সবাই অবৈধ।” কলকাতায় বিবিসির সাবেক সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক, যিনি বর্তমানে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে রয়েছেন, বলছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের ঠিক আগে দিল্লির পক্ষ থেকে এসব বক্তব্য বিবৃতির মূল্য উদ্দেশ্য বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারের সাথে অধিকতর ঘনিষ্ঠতা। সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মিজদের রোহিঙ্গা বিরোধী কট্টর মনোভাবের সাথে একাত্ম হতে চাইছে ভারত। মি ভৌমিক বলছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে চীনের মৌনতার সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি সরকার। ভারতের মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মিয়ানমার স্টাডি সেন্টারের অধ্যাপক জিতেন নংথাওবামকে উদ্ধৃত করে সুবীর ভৌমিক বলছেন – “মুসলিমদের প্রশ্নে বার্মিজ জাতীয়তাবাদী এবং কট্টর বৌদ্ধরা মি মোদি এবং তার দল বিজেপির সাথে একাত্ম বোধ করে।” ভারত যে সম্প্রতি বিশেষ অভিযানের জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেছেন, সেটাকেও দেখা হচ্ছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনা অভিযানের প্রতি দিল্লির সমর্থন হিসাবে। মি ভৌমিক বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে ভারত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরিতে উন্মুখ কারণ, ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে বিদ্রোহী তৎপরতায় লিপ্ত যোদ্ধাদের অনেকেই মিয়ানমারের জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ফলে তাদের শায়েস্তা করতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ভারতের প্রয়োজন। মিয়ানমারে ভারত এখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পের সাথে যুক্ত। রাখাইন রাজ্যেই ভারত একটি বন্দর এবং নদীপথ প্রকল্পে জড়িত। ভারতের মিজোরাম এবং রাখাইন রাজ্যের মধ্যে একটি সড়ক নির্মাণেও ভারত জড়িত। সুবীর ভৌমিক বলছেন, ভারতের মূল উদ্দেশ্য মিয়ানমারে চীনের প্রভাব বলয়ে ফাটল ধরানো। তার মিয়ানমার সফরে নরেন্দ্র মোদি বাগান এলাকায় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত একটি প্যাগোডা দেখতে যাবেন। এই প্যাগোডাটি ভারত সংস্কার করে দিচ্ছে। স্থানীয় স্টেডিয়ামে তিনি একটি জনসভাতেও ভাষণ দেবন। সম্ভাব্য উদ্দেশ্য – ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ভাবাবেগ ব্যবহার করে বার্মিজ জাতীয়তাবাদীদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা। সূত্র : বিবিসি বাংলা।