আন্তর্জাতিক

ভারতে হিন্দুত্ববাদবিরোধী সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা

By Daily Satkhira

September 06, 2017

ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ব্যাঙ্গালোরে নিজ বাড়ির সামনেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন গৌরী লঙ্কেশ। নিজের সম্পাদিত পত্রিকার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষের সংগঠনকে প্রণোদনা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। উগ্র ডানপন্থার বিরুদ্ধে নিরন্তর সমালোচনা জারি রেখেছিল তার পত্রিকা। নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো এখনও হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে সমর্থ হয়নি।

প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং লঙ্কেশ পত্রিকা্র সম্পাদক গৌরী লঙ্কেশ। তার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আনন্দবাজআর পত্রিকায় পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বেঙ্গালুরুর রাজরাজেশ্বরীনগরে গৌরী লঙ্কেশের বাড়িতে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করে। আনন্দবাজার একে আবারও  ‘বিদ্বজ্জনের উপর হামলা’ হিসেবে হাজির করেছে। তারা লিখেছে, কন্নড় শিক্ষাবিদ তথা সাহিত্যিক এম এম কালবুর্গিকে যে ভাবে খুন করা হয়েছিল, ঠিক সেই ধাঁচেই আজ খুন করা হল গৌরী লঙ্কেশকে।

ব্যাঙ্গালোরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার বিবিসিকে জানিয়েছেন, “মঙ্গলবার রাতে যখন তিনি বাড়ি ফিরছিলেন, তখন বাড়ির ঠিক সামনেই গুলি চালানো হয়। ঠিক কী কারণে এই হামলা হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানিয়েছে, “গৌরী যখন বাড়ির দরজা খুলছিলেন, ঠিক সেই সময়েই বুকে সরাসরি দুটো আর মাথায় একটা গুলি করা হয়।” সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, গৌরিকে অন্তত ৭ বার গুলি করা হয়েছে। এদিকে ওয়ান ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেঙ্গালুরুর রাজারাজেশ্বরী নগরের বাড়ির সামনে হাঁটছিলেন গৌরী লঙ্কেশ। বাড়ির সদর খুলে ভিতরে ঢুকেও পড়ছিলেন। এমন সময় গৌরীকে খুব কাছ থেকে পরপর গুলি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি গুলি গৌরীর কপালকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছিল। তড়িঘড়ি গৌরীকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও কোনও লাভ হয়নি। কারণ, ঘটনাস্থলে মারা গিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে ঘটনাস্থল থেকে চারটি কার্তুজের খোল মিলেছে।

চল্লিশ বছর আগে বাবার শুরু করা ‘লঙ্কেশ পত্রিকা’র দায়িত্ব নিয়েছিলেন গৌরী। ছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক। ওই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী এক সংগঠন  ‘কমিউনাল হারমনি ফোরাম’ কে সামনে আনার চেষ্টা করেছেন, দিয়েছেন নানা উৎসাহ। তার পত্রিকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সপক্ষে এবং দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদের বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করা হয়।

পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছ, বাড়ির ভিতরে ঢুকে খুব কাছ থেকে পর পর তিন বার গুলি করা হয়েছে গৌরী লঙ্কেশকে। তিনি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন এবং অল্পক্ষণের মধ্যেই জীবনের ওপারে চলে যান। গৌরী লঙ্কেশ কর্নাটকের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখতেন। বরাবরই তিনি কট্টরবাদের তীব্র সমালোচক ছিলেন। তাই কালবুর্গির মতো লঙ্কেশও কট্টরবাদীদের হাতেই খুন হলেন বলে অনেকে মনে করছেন। তবে কারা তাকে খুন করেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে দাবি পুলিশের।

২০১৫ সালে ঠিক এভাবেই নিজের বাড়ির সামনে খুন হয়েছিলেন বুদ্ধিজীবী তথা মুক্তমনা বলে খ্যাতি পাওয়া এমএম কালবর্গী। ৭৭ বছর বয়সী ওই চিন্তাবিদকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। গৌরী মৃত্যুকালে রেখে গেছেন মা, বোন এবং ভাইকে। ইন্দ্রজিথ নামে এই ভাই সিনেমা পরিচালনার পাশাপাশি গৌরীর সঙ্গে ‘লঙ্কেশ পত্রিকে’ দেখভালও করতেন।