আন্তর্জাতিক

সীমান্তে অমানবিক ল্যান্ড মাইন বসাচ্ছে মিয়ানমার

By Daily Satkhira

September 06, 2017

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাইন বসানো দেশের একটি মিয়ানমার। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে যেসব দেশ সই করেনি, মিয়ানমার তার একটি

তিনদিন ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তের একাংশ জুড়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ল্যান্ড মাইন বসাচ্ছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থার খবরে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের দু’টো সরকারি সূত্রের বরাতে তারা জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমরা যেন আর মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে সেজন্যই মাইনগুলো রাখা হচ্ছে।

বিষয়টি অতি সংবেদনশীল হওয়ায় নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেনি সূত্রগুলো। তারা জানিয়েছে, সীমান্তের কাছে ল্যান্ড মাইন বসানোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানানো হবে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, সীমানা পিলারের পাশ দিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার পাশাপাশি মিয়ানমার ল্যান্ড মাইন বসাচ্ছে। তবে দু’টি সূত্রই বলছে, সীমান্তের কাছে মাইন বসানোর তথ্য গোপন সংবাদদাতাদের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারে বাংলাদেশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য এবং মাইন বসানোর ছবিও ঢাকার কাছে রয়েছে।

যারা মাইন বসাচ্ছিল তাদের সামরিক পোশাকে থাকার ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেনি সূত্রগুলো। তবে তারা যে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নয় সে ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত ছিল তারা।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কর্মকর্তা মনজুরুল হাসান খান আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানান, সীমান্তে মিয়ানমার অংশে মঙ্গলবার দু’টো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছিল। তখন থেকেই ল্যান্ড মাইন বসানোর সন্দেহটা পাকাপোক্ত হয়।

মনজুরুল হাসান আরও বলেন, মঙ্গলবার সীমান্ত পার হওয়ার সময় বিস্ফোরণে একটি ছেলের পা উড়ে যায়। তাকে বাংলাদেশে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। একই ধরনের বিস্ফোরণে আরেকটি ছেলে আহত হয়। তারা ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণেই আহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সোমবার একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী সীমান্তের ওই বিস্ফোরণস্থলের কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি মাটিতে পুঁতে রাখা চার ইঞ্চি পরিধির একটি ধাতব চাকতির ছবি তুলে আনেন। সেখানে এরকম আরও দু’টো ডিভাইস তিনি দেখেছেন বলে জানান। মনে করা হচ্ছে ওগুলো ল্যান্ড মাইন।

সোমবার দুপুর আড়াইটায় বিস্ফোরণের ঠিক আগে ওই এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন দু’জন রোহিঙ্গা শরণার্থী। তবে ওই ডিভাইসগুলো যে ল্যান্ড মাইন, বা মিয়ানমারের সেনা সদস্যরাই সেগুলো বসিয়েছে, সেটি নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

সীমান্তের কাছে বিস্ফোরণ নিয়ে এখনো মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কিছু বলেনি। দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চি’র মুখপাত্র জাও তেও এ ব্যাপারে বলেন, বিস্ফোরণ কোথায় হয়েছে, কারা সেখানে গিয়েছিল বা কে মাইনগুলো বসিয়েছে এ প্রশ্নগুলোর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। সন্ত্রাসীরা মাইন বসায়নি এটাই বা কিভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়!– এমন প্রশ্ন তোলেন সু চি’র মুখপাত্র।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। সূত্রগুলো বলছে, যা কিছু হচ্ছে তার সবই মিয়ানমারের ভেতর।

সূত্রদের একজন বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে তারা কিছু করছে না। কিন্তু এর আগে আমরা কখনো সীমান্তের কাছে মিয়ানমারকে ল্যান্ড মাইন বসাতে দেখিনি।’

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাইন বসানো দেশের একটি মিয়ানমার। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে যেসব দেশ সই করেনি, মিয়ানমার তার একটি।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।