খোলা মত

বিশ্ব সভ্যতা ও মানবতার পক্ষে আমরা – ইদ্রিস আলী

By Daily Satkhira

September 08, 2017

জীবন যেখানে বন্দুকের গুলির নিশানা, নারী শিশু বৃদ্ধ যেখানে ক্লান্তিহীনভাবে হাটছে তো হাটছেই। শুধু জীবনটা বাঁচাতে হবে।

খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেলের বদৌলতে যখন প্রায়ই দেখছি মানুষের মিছিল। নাম কি? অনু প্রবেশকারী। মায়ানমার বলছে, ওরা তাদের দেশের নাগরিক না। বাংলাদেশ বলছে তারা অনুপ্রবেশকারী। এখন উপায় কি? মৃত্যুর মিছিল তো প্রায়ই দেখছি মালয়েশিয়ার গণ কবর। অবৈধভাবে নদী পথে বিদেশগামীদের নদীতে ডুবে মরার কাহিনী, কর্মরত শ্রমিক ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু, নিজেরা মারামারি করে হত্যা খুনের অভিযোগে ফাঁসি, শিরচ্ছেদ আরও কত। মায়ানমার একটি দেশ। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে। আজ ২০১৭ সাল। বাংলাদেশে কয়েক লক্ষ লোক মায়ানমার থেকে এসে রয়েছে অনেক দিন। কারণ ঐদেশে তারা নিরাপদ নয়। আবার লক্ষ লক্ষ লোক মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে। তাদের দেশের সেনাবাহিনী পুলিশ বলছে তারা সে দেশের সংগঠন আরসাকে আশ্রয় দিচ্ছে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা করছে। পুলিশও তাদের খুন করছে। তাই তারা রোহিঙ্গাদের শায়েস্তা করার জন্য এ ধরনের কাজ করছে। বুঝলাম যে দেশের অনেকগুলো সংগঠন সরকারের দেশ পরিচালনার সাথে একমত নয়। কিন্তু তাই বলে তাদের উপর গুলি চালাতে হবে? দীর্ঘদিন সে দেশে সেনা শাসন চলছে। বর্তমানে অং সান সু চি ক্ষমতায়। আমরা জানি, অংসান সুচি ক্ষমতায় থাকলেও আসলে সমগ্র কর্তৃত্ব সে দেশের সেনাবাহিনীর। মার্কিনীদের মদদে মায়ানমারে সেনা শাসন ও গণতন্ত্রপন্থী অংসান সুুচির প্রতিনিধি দ্বারা দেশ চলছে। আমাদের দেশে যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদী রাজনীতির সমর্থক, তারা এখন নড়ে চড়ে বসেছে। আবার সরকার এখানে অনুপ্রবেশকারী এত লোকের থাকা খাওয়া নিয়ে বড়ই দুঃশ্চিন্তায়। জাতিসংঘ ও মার্কিনীদের সহযোগিতা চেয়েছে সরকার। জাতিসংঘের কাছে ত্রাণ সহযোগিতার কথাও বলা শুরু করেছে। কিন্তু একটি দেশ জাতিসংঘ অধিভূক্ত হলে তাকে কিছু আন্তজার্তিক মানবাধিকার ও নিরাপত্তার নিয়ম মানতে হবে। না মানলে সেই দেশকে জাতিসংঘ সতর্ক করতে পারে। চিঠি দিতে পারে। সেটা কতটুকু হচ্ছে? আমাদের দেশে যুদ্ধাপারাধীদের ফাঁসি ঠেকাতে জাতিসংঘ মহাসচিব চিঠি দিয়েছিলেন বলে শুনা যায়। আর এত বড় বর্বরতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরব কেন? আমরা জানি, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকল নাগরিক সমঅধিকার, সমমর্যাদা পাবে। যে শিশু জন্মগ্রহণ করছে তার নিরাপত্তা, খাদ্য সংস্থান ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করবে রাষ্ট্র। নারী শিশু, বৃদ্ধ, যুবক তাদের সুরক্ষায় রাষ্ট্র যদি নিরব থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেই রাষ্ট্রে কোন সরকার নেই বা দায়িত্বশীল সরকার নেই। রাষ্ট্রের মধ্যে কেউ যদি রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করে তার বিরুদ্ধে সরকার যেমন ব্যবস্থা নিবে তেমনি রাষ্ট্রের দায়িত্ব সব নাগরিকের নিাপত্তা বিধান করা। তা না হলে জাতিসংঘ সাধারণ সভা ডেকে সে দেশে যারা দায়িত্বশীল ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। সাধারণ জনগণের জন্য বিশেষ সহায়তা কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে কোন দেশের জনগণ পার্শ্ববর্তীদেশে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা বা তাদের সহায়তা দেওয়া মূল সমাধান নয়। বরং দেশের ভিতরের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। মায়ানমারের পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে ও ভারত যৌথভাবে একটি কর্ম কৌশল নির্ধারণ করতে পারে। এমনিতে আমাদের দেশে একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে দেশ পেয়েছি সেই দেশে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রীষ্টান সবার জন্য সমান অধিকারের একটি দেশ হওয়ার কথা, লুট পাট দুর্নীতিমুক্ত সুশাসনের বাংলাদেশ হওয়ার কথা। সেখানে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে পরিবারের হত্যার মধ্য দিয়ে ১৫ বছর সামরিক শাসন চলেছে। সামরিক শাসনের নামে বি.এন.পি, জাতীয়পার্টি ও জামাত বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে কলংকিত করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। তাদের রাজনীতি ও সমর্থক গোষ্ঠী নানান অপপ্রচারে ব্যস্ত। এই সময় আন্তজাতিক মহলে আলোচনা এখন সময়ের দাবি। রোহিঙ্গা, মায়ানমার এ ধরনের কৃত্রিম ইস্যুর ফাঁদে আমাদের পড়া উচিৎ নয়। আমরা যেমন সকল মানুষের সমঅধিকার চাই, তেমনি সারা পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের পক্ষেও আমরা। মায়ানমার সরকারের কাছে আমরা দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রত্যাশা করছি। খুন নির্যাতনের বিচার চাই। লেখক : সাধারণ সম্পাদক, জাসদ, সাতক্ষীরা জেলা শাখা ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি।