ফিচার

জীর্ণ শীর্ণ অবস্থায় মারা যাচ্ছে প্রসূতি মা ও শিশুরা

By Daily Satkhira

September 08, 2017

রম স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে জীর্ণ শীর্ণ অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রসূতি মা ও শিশুরা। গত দুই সপ্তাহ অভুক্ত থেকে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে অন্তত: ১৫০টি শিশু। প্রসূতি মা মারা গেছেন কমপক্ষে ১০ জন। দিন দিন মৃতের এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতাল ও সীমান্তের বিভিন্ন মেডিক্যাল টিম সুত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের তিন উপজেলা টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ির সড়ক মহাসড়ক কিংবা গ্রামের পথে পথে এখন রোহিঙ্গাদের স্রোত। তারা প্রতিদিনই রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাদায় একাকার হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে। তাদের সাথে থাকা শিশুরা অনাহারে-অর্ধাহারে কংকালসার হয়ে পড়েছে। মায়েরা অভুক্ত থেকে দীর্ঘ পথ হেটে বাংলাদেশে আসছেন। ফলে তাদের অবস্থাও গুরুতর। এ কারণে তারা শিশুকে বুকের দুধ দিতে না পারায় হাড্ডিসার অবস্থা শিশুদের। শত শত শিশুর শরীর জ্বরে পুড়ছে। কিন্তু কোলে নিয়ে বসে থাকা ছাড়া করার কিছু নেই হতভাগা মায়েদের। পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, আমাশয়, নিমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন চর্মরোগেও আক্রান্ত শিশুরা। নানা কারণেই বাড়ছে রোহিঙ্গা শিশু মৃত্যুর হার।

গত দুই সপ্তাহে অন্তত: ১৫০টি শিশু ১০ জন প্রসূতি মা মারা গেছে। অনেক গর্ভবতী নারী সীমান্তের দূর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অসময়ে সন্তান প্রসব করেছেন। নতুন আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ঠিকমত চিকিৎসা করার সুযোগ নেই। কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আন্তজার্তিক সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের খাদ্য সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার উপর জোর দেয়া প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করছেন।

শরণার্থী শিবিরের এনজিওকর্মীরা জানিয়েছেন, তাদের জনবলের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য সেবা দেয়া খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। যারা শরণার্থী শিবিরের কাছাকাছি অবস্থান করছেন তারা দেরিতে হলেও চিকিৎসা পাচ্ছেন। কিন্তু যারা সীমান্তবর্তী গ্রামে এবং জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছেন বিনা চিকিৎসায় তাদের স্বাস্থ্যহানী হচ্ছে।

রোহিঙ্গারা জানান, ত্রাণ বিতরকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো ত্রাণ দেয়ার পাশাপাশি যদি ভ্রাম্যমাণ মেডিক্যাল টিম গঠন করে চিকিৎসা দেয় তবে অসুস্থ রোহিঙ্গাদের উপকার হবে। এদিকে মিয়ানমারে সেনবাহিনী ও তাদের সহযোগী বৌদ্ধ উগ্রপন্থিদের নির্মমতা থামার কোনো লক্ষণ নেই। প্রতিদিনই আরকানের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কোনো না কোনো গ্রামে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যাচ্ছে। শত শত ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে তাই রোহিঙ্গারা খাল বিল নদী পার হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে জড়ো হচ্ছেন। বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য নাফ নদী ও বঙ্গোসাগর পার হতে গিয়েও তারা লাশ হচ্ছে। রাতে নৌকায় পালিয়ে আসার সময় প্রতিদিনই নৌকা ডুবি হচ্ছে। নাফ নদী কিংবা টেকনাফ সমুদ্র উপকূলে প্রতিদিনই রোহিঙ্গাদের লাশ ভেসে আসছে।

কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ এবং বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তে জুড়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা তাবু টাঙ্গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরনার্থীর চাপে কক্সবাজার ও বান্দরবনসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা করছে স্থানীয়রা। হাজার হাজার রোহিঙ্গার মাঝে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্যের জন্য তারা রাস্তায় বসে আছে।

কোনো গাড়ি দেখলেই ছুটে আসে। কোনো গাড়ি থেকে শুকনো খাবার দিতে দেখলে তা সংগ্রহ করতে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। এ প্রযোগিতায় বৃদ্ধ ও শিশুদের প্রাণহানির আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। দেশের মূল ভু-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন শাহপরীর দ্বীপে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের মধ্যেও খাদ্য সংকট চরম আকার ধারন করেছে। দ্বীপের সাবরাং ইউনিয়ন সচিব শেখ ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শাহপরীর দ্বীপে আসছেন। এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।

দ্বীপের বাসিন্দা আবদুল হক জানান, রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশায় সহমর্মিতা ও সহানুভুতি দেখিয়ে দ্বীপের মানুষ যতটুকু সম্ভব সহায়তা করেছেন। এমনকি ফ্রিজে রাখা কোরবানির গোশত রান্না করে অনেকেই অভুক্ত রোহিঙ্গাদের দিয়েছে। বস্ত্রহীনদের কাপড় দিয়েছে। গাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পর্যাপ্ত সরবরাহের অভাবে এই দ্বীপে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। চাল-ডাল তেল তরিতরকারীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মুল্য এখন আকাশ ছোঁয়া।